ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাণিজ্যমেলা

‘সুযোগ পাইলে চুরি কইরা মেলায় ঢুকি’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
‘সুযোগ পাইলে চুরি কইরা মেলায় ঢুকি’ কাশেম

ঢাকা: সকাল পৌনে ১১টা। কুয়াশা আর শীতের তীব্রতায় সূর্যের দেখা নেই। বিশ্ব ইজতেমার প্রভাবে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ তখনও জমে ওঠেনি। যারা এসেছেন তারাও মোনাজাত ধরেছেন।

বিভিন্ন স্টলের কর্মচারীরা তখন স্টল ঝাড়পোচের কাজে ব্যস্ত। কর্মচারীদের ফেলে দেওয়া পরিত্যাক্ত ময়লা-আবর্জনা থেকে প্লাস্টিকের বোতল অন্যান্য জিনিসপত্র কুড়িয়ে টপাটপ বস্তায় ভড়ছে টোকাই কাশেম।

শরীরজুড়ে তার শীতের রুক্ষতার ছাপ। মুখের চামড়া, ঠোঁট ফেটে গেছে।

গায়ে শীতের হালকা পোশাক। বোঝা যাচ্ছে তাতে শীত মানছে না। শীতের তীব্রতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাঙ্গণজুড়ে ফেলে দেওয়া পরিত্যাক্ত আবর্জনার স্তূপ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী খুঁজে নিচ্ছে কাশেম।

গেল কয়েক বছর থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় টোকাই-ভিক্ষুক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও মেলা প্রাঙ্গণে তাদের দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে টোকাই-ভিক্ষুক।

কাশেমসহ অন্যান্য টোকাইরা বেশিরভাগ সময়েই লুকিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। তবে কোনোভাবেই সুযোগ না পেলে অন্যান্য দর্শনার্থীদের মতোই তারাও টিকিট কেটেই মেলায় প্রবেশ করে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে কাশেম বলে, “সব সময় চুরি কইরা ঢুকি। মেলার বাথরুম যেদিকে ওই দিকে দরজা খোলা পাইলে ঢুইকা যাই। যেদিন বেশি ভিড় হয়, সেই দিন ঢুকতে সুবিধা। সুযোগ না পাইলে টিকিট কাইটা ঢুকি। ”

চুরি করে ঢোকার সময় ধরা পড়লে পুলিশ ও মেলার নিরাপত্তাকর্মীরা বেদম মারধর করে বলেও জানায় কাশেম।

আরেক টোকাই রফিক বলে, মেলায় অনেক ভাঙারি পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের ভাঙারি কুড়িয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। সেই টাকা বাপ-মায়ের হাতে তুলে দেই।  

কাশেমের মতো রফিককে সব সময় চুরি করে ঢুকতে হয় না। একটি স্টলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে রফিকের মা। মায়ের সঙ্গে ঢুকে পড়ে সে। নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে সেদিন লুকিয়ে ঢুকতে হয় তাকে।

মার খেয়ে, চুরি করে বা কষ্টের টাকা দিয়ে মেলায় প্রবেশ করা- এসব টোকাইদের ওপর সহানুভূতির পরিবর্তে বেশির ভাগ দর্শনার্থীই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর থেকে মেলায় আসা তাসলিমা বেগম বিরক্তি নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় টোকাই বা ভিক্ষুকরা খুব বিরক্ত করে। ওদের জন্য খাবার কিনে খাওয়া যায় না। পিছে পিছে ঘোরে, কয়জনকে কিনে দেওয়া যায়। এতে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ইপিবি'র মাঠকর্মী রাশেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তৎপর আছেন যাতে কোনো ভিক্ষুক বা টোকাই ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। টিকিট কাউন্টারেও বিষয়টা লক্ষ্য করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও ওরা চুরি করে ঢুকছে, ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রাঙ্গণে টোকাই বা ভিক্ষুক দেখলে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

মাসজুড়ে চলা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-বিক্রেতারা বিপুল অঙ্কের লেনদেন করছেন। কিন্তু উল্টো চিত্র দেখা যায়, ছিন্নমূল শিশুদের ক্ষেত্রে। জীবন চালাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া পিতা-মাতাকে একটু সাহায্য করতে মারধরের ঝুঁকি নিয়েই লুকিয়ে অবৈধভাবে মেলায় প্রবেশ করছে ছিন্নমূল শিশুরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।