ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাণিজ্যমেলা

হকারের দখলে বাণিজ্যমেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
হকারের দখলে বাণিজ্যমেলা বাণিজ্যমেলায় হকারের দৌরাত্ম্য | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: অনুমতি না থাকলেও অবৈধভাবে বাণিজ্যমেলায় বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন হকাররা। পোশাক, ঘর সাজানোর সামগ্রী থেকে শুরু করে কি নেই তাদের কাছে। নানান পণ্যসামগ্রী নিয়ে বড় বড় প্যাভিলিয়ন বা স্টলের সামনেই বসে পড়ছেন হকাররা। তাদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় কমেছে বিভিন্ন স্টলের বেচাবিক্রি।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, কোনো ধরনের মিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেড়ে চলেছে হকারের সংখ্যা। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় মেলার শেষ দিনগুলোতে হকারের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।

তারা নামি-দামি স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে শাড়ি, থ্রি পিস, ওড়না, ঘর সাজানোর সামগ্রী, পান, বিড়ি-সিগারেট, পানি, ফুসকা, চিপস বা খেলনা জাতীয় পণ্য নিয়ে যত্রতত্র বসে পড়ছেন।

হকারের কাছে নানা পণ্য পাওয়ায় ক্রেতা হারাচ্ছে স্টলগুলো। তবুও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে হকারের দৌরাত্ম বাড়ায় দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন দর্শনার্থীরা। তাদের মতে, যে প্রদর্শনীর কারণে রফতানি অর্ডার আসবে, থাকবে বিদেশি ক্রেতা। সেখানে হকার বা ভিক্ষুকের কারণে ইমেজ সংকটে পড়তে হচ্ছে।

আরিফা সুলতানা নামে এক দর্শনার্থী বলেন, কোনো আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে এভাবে হকার আসতে পারে না। এখানে দেশের ইমেজ জড়িত। তাছাড়া সুযোগ দেওয়া হলে হকার কেন যে কেউ মেলায় আসতে পারে, এজন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী।

অন্যদিকে যত্রতত্র হকার প্রবেশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্টল কতৃপক্ষও। তাদের অভিযোগ—মেলা কমিটি না চাইলে এভাবে হকার আসতে পারে না। এতে মূল স্টলের বেচাবিক্রি কমে গেছে।

রংবেরং স্টলের বিক্রেতা রায়হান বলেন, এবার ভাঙা মাসে মেলা শুরু হওয়ায় বিক্রি প্রথম থেকে কম ছিলো। এর মধ্যে সব ধরনের মালামাল নিয়ে হকার মেলায় আসায় ক্রেতারা এখন হকারমুখী হয়েছেন। মেলার শেষ সময়ে এমনটা হওয়ার কারণে আমাদের স্টল, স্টাফ খরচ উঠবে না।

তবে হকার প্রবেশ বন্ধ করতে প্রতিদিনই অভিযান অব্যাহত রেখেছে মহানগর মেট্রোপলিন পুলিশ (ডিএমপি)।  কিন্তু একা কারো পক্ষে হকার বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আহাদ বলেন, আমরা প্রতিদিন গ্রেফতার করছি। তাদের প্রবেশ করতে বাধা দেই। সকালের দিকে স্টলের মালামাল আসার মুহূর্তে স্টলের নাম করে কিছু হকার ঢুকে পড়ে। তবে মেলার পরিবেশ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিনজন হকারকে আটক করা হয়েছে।

তবে দায়ছাড়া কথা বলছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব আবদুর রউফ বলেন, আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে মেলা শেষ করতে চাই। আমরা যখন মেলায় থাকি তখন হকার থাকে না।

মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্দা নামবে। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এবারই প্রথম মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।  

মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি।

এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
ইএআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।