ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বিনা ভোটে ত্রিপুরা বিধানসভায় ঢুকছেন বিজেপির ৭ বিধায়ক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৭
বিনা ভোটে ত্রিপুরা বিধানসভায় ঢুকছেন বিজেপির ৭ বিধায়ক! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রামনাথ কবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে তৃণমূল বিধায়করা। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: বামদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ত্রিপুরা রাজ্যেও হানা দিলো নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এবার আসন পাকাপোক্ত করার পালা। রোজভ্যালি কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মতো টালমাটাল ত্রিপুরায় টানা ১৭ বছরের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। রাজ্যে ঢুকে পড়েছে সিবিআই। ঠিক সেই মুহূর্তে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের ৭ বিধায়ক যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। শাসক সরকারের জন্য এটা বড় ধাক্কা।

পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরার মতো রাজ্যে আসন গাঁড়তে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো বিজেপি। দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির তারকা নেত্রী রূপা গাঙ্গুলী বিভিন্ন সময় ত্রিপুরা সফর করে দল শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন।

করপোরেট পুঁজির শক্তিশালী দলটি ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মাস আটেক আগে দেখিয়ে দিলো তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেন্দ্র করে ত্রিপুরা বিধানসভায় থাকা নয়জন বিরোধীদলীয় বিধায়ক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ছয়জন ও কংগ্রেসের একজন বিধায়ককে ভাগিয়ে নিলো বিজেপিতে। এরইমধ্যে তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী রামনাথ কবিন্দকে  সমর্থন জানাবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
 
নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে সাত বিধায়কের এ সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনীতিতে ফেলতে পারে বড় প্রভাব। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বামদের দীর্ঘদিনের এ ঘাঁটি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত যদি ও সাত বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেয় তাহলে বিনা ভোটেই ত্রিপুরা বিধানসভায় আসন গাঁড়তে চলেছে বিজেপি। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্তত এমনটাই পূর্ভাবাস দিচ্ছে।  

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়াদ শেষ হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিজেপি তাদের দল থেকে বিহার রাজ্যের সাবেক রাজ্যপাল রামনাথ কবিন্দকে প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। অপরদিকে বিরোধীদল কংগ্রেস ভারতের পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার মীরা কুমারকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রার্থী মনোনীত করেছে। তাকে সমর্থন দিয়েছে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেস দল।
 
ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এ বিষয়ে দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব কোনো আলোচনা করেনি। গতবছর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ত্রিপুরা রাজ্যের ছয় বিধায়ক দলের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জানিয়ে দেন তারা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মীরা কুমারকে ভোট দেবেন না।
 
তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা শুনে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব ত্রিপুরা রাজ্যের নিজ দলের বিধায়কদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়।
 
বিজেপির আহ্বান জানায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রামনাথ কবিন্দকে সমর্থন করার। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির হোটেল গিবান তাজে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজেপি-তৃণমূল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অতিথিরাএতে বিজেপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রামনাথ কবিন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাকে ভোট দেওয়ার কথা জানান ত্রিপুরা রাজ্যের ছয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ, আশিষ কুমার সাহা, দিবাচন্দ্র রাংখল, দিলীপ সরকার, বিশবন্ধু সেন ও প্রাণজীৎ সিংহ রায়। তাদের সঙ্গে গৌহাটি গিয়ে একই কথা জানান কংগ্রেসের বিধায়ক রতন লাল নাথও।

সূত্রের খবর, এই সাত বিধায়ককে নিয়ে এ হোটেলেই বৈঠক করেছে বিজেপির সাংগঠনিক শাখার সর্ব ভারতীয় সম্পাদক রাম মাধব ও বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। বৈঠকে ঠিক হয়েছে ত্রিপুরার সাতজন বিধায়ক আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।

বিজেপির দলীয় সূত্র জানায়,  ত্রিপুরা রাজ্যে একসঙ্গে ৭ বিধায়কের যোগদানকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে চায় দল। এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, দলের সাংগঠনিক শাখার সর্বভারতীয় সম্পাদক রাম মাধব ও ভারত সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং। অনুষ্ঠানের দিন এখনও ঠিক হয়নি, তবে জুলাই মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করে নিতে আগ্রহী দল।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
এসসিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।