ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সাফল্যে শুরু ও শেষ, মাঝে বিতর্ক

নুরুজ্জামান ফারাবি, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সাফল্যে শুরু ও শেষ, মাঝে বিতর্ক

ঢাকা: বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন বেশ এগিয়েছে। ২০১৩ সালে দেশের ক্রিকেট উত্কর্ষতার শিখরে না উঠলেও আগের চেয়ে অনেক ভালো বলা চলে।

মুশফিকুর রহিম আস্থার সঙ্গে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। দেশের অগণিত ক্রিকেট ভক্তরা সেটা বুঝতে পারছে, দেশীয় ক্রিকেটের হর্তাকর্তাদেরও জানা সেটা। এজন্য আগামী আইসিসি বিশ্বকাপ পর্যন্ত মুশফিককেই রাখা হয়েছে দলের নেতৃত্বে। দায়িত্বে থেকে দল ও দেশকে ভালো কিছু উপহার দিবেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান, প্রত্যাশা সবার। চলতি বছর মুশফিকের বাংলাদেশের পারফরমেন্স বিশ্লেষণ করলে এসব ভাবনা বিলাসিতা নয়।

যদিও দেশের ক্রিকেটে মাঝে কিছু বির্তক ছড়িয়েছে। স্পট ফিক্সিংয়ের কালো থাবা পড়েছে, হয়েছে নির্বাচন নিয়ে অল্প সময়ের তামাশা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে হুমকিতে ফেলেছে বিশ্ব দরবারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এ বছরকে সফল বলা চলে টাইগারদের জন্য।

এ বছর তিনটি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেছে মুশফিক বাহিনী। শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে। মার্চে সিংহলিজদের যেভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছিল শুরুতে তাতেই বোঝা গেছে ভ‍ালো সময় কাটবে। গালেতে উদ্বোধনী টেস্টে কুমার সাঙ্গাকারা, লাহিরু থিরিমান্নে ও দিনেশ চান্দিমালের শতকের জবাব দিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিক ও নাসির হোসেন। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির কৃতিত্ব গড়লেন মুশফিক। নিজের গড়া সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস খেলার রেকর্ড নয় বছর পর নিজেই ভাঙলেন আশরাফুল। এই দুই ব্যাটসম্যান দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ টেস্ট জুটির রেকর্ড গড়েছেন ২৬৭ রান করে। বাংলাদেশি অধিনায়কের ২০০, আশরাফুলের ১৯০ ও নাসিরের (১০০) শতকে প্রথমবারের মতো ছয়শ’র উপর দলীয় সংগ্রহ করল টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ৬৩৮ রানের পর ম্যাচটি শেষ হয় ড্রতে।

অবশ্য পরের টেস্ট কলম্বোতে আর পেরে ওঠেনি মুশফিকরা। ৭ উইকেটে হ‍ার মানতে হয় তাদের। ১-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের পর ওয়ানডেতেও দুর্বার বাংলাদেশ। প্রথমটি ৮ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয়টি বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল। তৃতীয় ও শেষটি তিন উইকেটে জিতে ১-১ এ ওয়ানডে শিরোপাটি ভাগাভাগি করল টাইগাররা। একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে সত্য, কিন্তু ১৯৯ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৮১ রানে শেষ করাটাও কম নয়।

তবে এই সাফল্যের ধারা বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারেনি এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে সফরে। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের বাইরে থাকা জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে দেশের ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু দুম্যাচের সিরিজ শুরুই হলো ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে। পরের টেস্টটি সতর্কতার সঙ্গে খেলে ১৪৩ রানে জিতে শেষ পর্যন্ত সিরিজ ভাগাভাগি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

এরপর এলো ওয়ানডে সিরিজ, প্রথমটি ১২১ রানে জিতে শুরু করলেও মুশফিকরা পরপর দুটি ম্যাচ হেরে ২-১ এ সিরিজ খুঁইয়ে বসল। দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও হার দিয়ে শুরু হলো, শেষটি জিতে সমতায় ফিরলেও এই সফরে হতাশার দায় নিজের কাঁধে চাপিয়ে অভিমান নিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুশফিক।

অভিমান শেষে আবারও দেশের স্বার্থে দলের নেতৃত্ব চালিয়ে গেলেন মুশফিক। এবার তার হাত ধরে অসাধারণ সফলতা পেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দেখা গেল দেশি তারকাদের ঝলক। মুমিনুল হক প্রায় মুশফিকের ব্যক্তিগত সেরা রেকর্ডকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ১৯ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। অবশ্য ১৮১ রান করে আশরাফুলের একটি রেকর্ড ভেঙে দেশের তৃতীয় সেরা ব্যাটসম্যানের খ্যাতি কুড়ালেন কক্সবাজারের এই তরুণ।

এই টেস্টেই আরেকটি একক ইতিহাস তৈরি হলো। এক টেস্টেই সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ছয় উইকেট নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়লেন স্পিনার সোহাগ গাজী। ব্যক্তিগত ও দলীয় এসব পারফরমেন্সে ম্যাচটি হাতছাড়া হলো না টাইগারদের। শেষ হলো ড্রয়ে। ঢাকায় টানা দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করলেন মুমিনুল। মিরপুর টেস্টও হলো অমীমাংসিত। টাইগাররা প্রত্যাশার সবটুকু পূরণ করে টেস্ট সিরিজ শেষ করল। ওয়ানডেতেও দুর্দান্ত লাল-সবুজরা। প্রথম ম্যাচে রুবেল হোসেনের বোলিং তোপ ছিল দেখার মতো, হ্যাটট্রিকসহ ছয় উইকেট নিয়ে দলের জয়ে হলেন ম্যাচসেরা। পরের দুই ম্যাচ সহজে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কিউইদের বাংলাওয়াশ করল মুশফিক বাহিনী। একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লড়াই করে হারের পর বেশি বেশি এই ফরম্যাটে খেলার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশি অধিনায়ক।

আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে এ বছর সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল (৫৮৪), দুটি শতক ও দুটি ফিফটি তার। তার পরে আছেন মুশফিক (৪৯১) ও নাসির (৩৮৭)। ওয়ানডেতে শীর্ষ তিনে আছেন নাসির (৩২১), মাহমুদউল্লাহ (২৪৩) ও তামিম ইকবাল (২৪০)। ২০০ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বছরের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক, তার পরে শেষ করেছেন আশরাফুল (১৮১) ও মুমিনুল (১৮১)।

২২ উইকেট নিয়ে টেস্টের সেরা বোলার সোহাগ গাজী। চার ম্যাচ খেলে ১৯ উইকেট নেওয়া রবিউল ইসলাম তার পরে। ওয়ানডেতে নয় উইকেট দখলে নিয়ে শীর্ষে আব্দুর রাজ্জাক। সমান ৮ পয়েন্ট নিয়ে তার পরে দুই পেসার রুবেল হোসেন ও জিয়াউর রহমান।

এ বছর সফলতার সঙ্গে বির্তক ছিল ঘরে ও বাইরে। শুরু হয় বাংলাদেশের আইপিএল খ্যাত বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের স্পট ফিক্সিং নিয়ে। সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দেন। দেশের ক্রিকেটে নেমে আসে বড় ধরনের কলঙ্ক। আকসুর তদন্তে তাকেসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আগামী মাসে দ্বিতীয় শুনানি হবে। অবশ্য আশরাফুল আরও বড় বোমা ফাটিয়েছেন, জানিয়েছেন অনেক আগে থেকেই ফিক্সিং কলঙ্কের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ। আপাতত সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ আছেন অভিযুক্তরা।

গত বছর ম্যাচ পাতানোর দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আম্পায়ার নাদির শাহ এ বছর পেলেন ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

বিসিবির নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন নিয়ে চলছিল ধোঁয়াশ‍া। সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সরে দাঁড়ালে ২৬ জন বোর্ড পরিচালকের ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বর্তমান প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।

সর্বশেষ হতাশা ছুঁয়ে গেছে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির হস্তক্ষেপে। দেশে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। অবরোধ চলাকালে তাদের চট্টগ্রামের হোটেলের সামনে ককটেল ফাটে। নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগে দেশে ফিরে যায় ক্যারিবীয়রা। এমনই সফলতা ও হতাশায় বাংলাদেশের ক্রিকেট নতুন বছরে পা রাখছে। তবে হিসাব নিকাশে সফলতাই বেশ এগিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩
সম্পাদনা: ফাহিম হোসেন মাজনুন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।