ময়মনসিংহ: দিনপঞ্জিকা থেকে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। শুরু হবে নতুন বছর।
চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটার কারণে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর ভীতিকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহবাসীর এ বছরটি কেটেছে। রাজনীতির অপসংস্কৃতির অভিশাপে শিক্ষাঙ্গনও ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানিতে বিপর্যস্ত।
দু’ একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পুলিশ ধরতে পারলেও বাদ বাকি খুনের মূল আসামিদের ধরতে পারেনি পুলিশ। খুনের আসামিদের ধরতে না পারায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন নিহতদের পরিবার।
গত ২০ জানুয়ারি নষ্ট ছাত্র রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বলি হন নিরীহ শিশু রাব্বী (১০)। ওই দিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান রাব্বী। তখন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।
এ হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহত রাব্বির বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় বাকৃবি ছাত্রলীগের ২৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৫০ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ চিহ্নিত খুনিদের ধরতে গড়িমসি শুরু করলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।
পরে পুলিশ বাকৃবি ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকে গ্রেফতার করে। তবে এ মামলার খুনি ছাত্রলীগ নেতারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। শিশু রাব্বীর হত্যার বেশির ভাগ ঘাতকরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েন। খুনিরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠে।
আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বাংলানিউজকে জানান, ‘মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্তরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। ’
তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন সেলিম মৃধাকে (পাহাড়ি সেলিম)।
বিদায়ী বছরের ১সেপ্টেম্বর স্থানীয় গামারীতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক খানের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে তিনি প্রাণ হারান।
পরে ৫সেপ্টেম্বর নিহত সেলিম মৃধার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া শিল্পী হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক আজিজুল হক খানসহ ৩৮জনের নাম উল্লেখ করে ধোবাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শুরু থেকেই এ মামলার মূল আসামিদের ধরতে পুলিশ টালবাহানার আশ্রয় নেয়। হত্যাকাণ্ডের ক’দিন পরেই এজাহারনামীয় আসামি হীরা মিয়াকে ধরলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ আর কাউকেই ধরতে পারেনি।
পরে ৮সেপ্টেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তরিত করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর ৩ দফা বদল হয়েছে ডিবি পুলিশের ওসি’র পদটি।
এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ৩নং আমলী আদালতের মাধ্যমে এ খুনের এজাহারে আরও ৩০ আসামির নাম সংযোজন করা হয়।
পাহাড়ি সেলিমের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া শিল্পী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘাতকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের খাতায় তারা পলাতক। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। ’
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক আজিজুল হক খানকে এখনও গ্রেফতার সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, ‘মামলার প্রথম এজাহারে ৩৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে অভিযান চলছে। ’
বিদায়ী বছরের খুনের মিছিলের শেষ নাম ময়মনসিংহ শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরমান ইসলাম (২৯)। আধিপত্য বিস্তার ও আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে গত ৪ডিসেম্বর শহরের কাঁচিঝুলি সিদ্দিক মাস্টার রোড এলাকায় তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
খুনিরা আরমানের মৃত্যু নিশ্চিত করে বীরদর্পে প্রকাশ্যে পালিয়ে যায়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ মিডিয়ার কাছে স্বীকার করে।
এ ঘটনায় নিহত আরমানের বড় ভাই আদনান ইসলাম বাদী হয়ে ৯জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বাংলানিউজকে জানান, ‘এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ’
সম্ভাবনাময় তরুণ আইটি বিশেষজ্ঞ ইমরুল আহমেদ সম্পদের (২৮) হত্যাকাণ্ডটি ছিল বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত।
১১ জানুয়ারি কোতোয়ালী মডেল থানা থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ দূরে শহরের এস কে হাসপাতালের সামনে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে সম্পদকে খুন করে ।
বড় ভাই এনাম আহমেদ শোয়েবের বিয়ের বাজার করে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যাচ্ছিলেন সম্পদ। এ হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই সম্পদের বড় ভাই এনাম আহমেদ শোয়েব বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বাংলানিউজকে জানান, ‘এ মামলার জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: তমাল আবদুল কাইয়ূম, নিউজরুম এডিটর