ঢাকা: বছরটা শুরু ও শেষ হলো নোভাক জোকোভিচের সাফল্য দিয়ে। টানা তৃতীয়বার বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় দিলেন সার্ব তারকা, আর শেষ করলেন এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল্স জিতে।
হাঁটুর মারাত্মক চোট নিয়ে শঙ্কায় পড়েছিল ক্যারিয়ার। তবুও দুর্বার মনোবল নিয়ে সাত মাস পর কোর্টে ফিরলেন নাদাল। সফল হওয়ার কতটা তীব্র ক্ষুধা নিয়ে আবারও র্যাকেট হাতে নিয়েছিলেন সেটা বলে দেয় তার পরিসংখ্যানই। ফেব্রুয়ারি ফিরেই অখ্যাত চিলির কোর্টে ফাইনালে উঠলেন, কিন্তু এসেই শিরোপা জেতা হলো না আর্জেন্টাইন হোরাসিও জোবেয়াসের কাছে হেরে।
এই হার আরও অদম্য করে তুলল স্প্যানিশ তারকাকে। রেকর্ড অষ্টম ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা নাদাল উইম্বলডনের বিতর্কিত ঘাসের কোর্টে অন্য ফেভারিটদের মতোই হতাশা নিয়ে শেষ করেছেন। জুনের শেষদিকের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম রাউন্ডে বিদায়ের লজ্জা পেলেও ম্লান হয়ে যাননি নাদাল। এই একটি টুর্নামেন্ট ছাড়া প্রত্যাবর্তনের পর থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় চীনা ওপেন পর্যন্ত সবকটির ফাইনাল খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী তারকা। বেইজিংয়ের এই কোর্টেই ফিরে পেয়েছেন র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর আসনটি।
বছর জুড়ে ৮২ ম্যাচ খেলে জিতেছেন ৭৫ ম্যাচ। ১৩ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম পুরস্কার বগলদাবা করতে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী জোকোভিচকে হারিয়েছেন ইউএস ওপেনে। এরপর কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেও ১৮টি টুর্নামেন্ট খেলে ১০টি শিরোপা জিতে অনন্য কীর্তির স্বাক্ষর রেখেছেন নাদাল।
বিদায়ী বছরে নাদালের দুটি ও জোকোভিচের দখলে একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম যায়। বাকি ছিল উইম্বলডন, সেটার মালিকানা পান এন্ডি মারে। ৭৭ বছর পর ঘরের কোর্টে ব্রিটেনের শিরোপা খরা কাটে এই স্কটিশ তারকার হাত ধরে। চার তারকার তিনজনই স্মরণীয় করে রাখলেন বছরটি, কিন্তু ১৭ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী রজার ফেদেরারের জন্য বছরটি আসলেই ‘আনলাকি থার্টিন’। দুদশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো র্যাঙ্কিংয়ে চারের বাইরে চলে যেতে হয়েছে সুইস তারকাকে। বছর শেষ করছেন র্যাঙ্কিং ছয়ে থেকে। ২০০২ সালের পর এবারই প্রথম একটিও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠতে পারেননি তিনি। একটিমাত্র শিরোপা এসেছে জার্মানির গ্যারি ওয়েবার ওপেনে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন কি না সেটাই ভাবাচ্ছে ৩২ বছর বয়সী তারকার ভক্তদের।
অন্যদিকে ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ার পর মৃত্যুঞ্জয়ী সেরেনা গত বছর কোর্টে ফিরেই জিতেছিলেন উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন। এ বছর কেমন যাবে সেটারই বুঝি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আমেরিকান তারকা। সফলও হয়েছেন দারুণভাবে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে স্বদেশী স্লোন স্টিফেন্সের কাছে হেরে বিদায়। এরপর টানা চারটি ডব্লুটিএ শিরোপা জিতে রোলাঁ গাঁরোয় নেমেছিলেন ১১ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে। রাশিয়ান তারকা মারিয়া শারাপোভাকে ফাইনালে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে সফলও হলেন দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন জিততে।
পরের গ্র্যান্ড স্ল্যাম উইম্বলডনে নক্ষত্রদের পতনের কাতারে গেলেন সেরেনাও। তবুও থেমে যাননি। ৩২ বছর বয়সী তারকা পরবর্তী ছয়টি টুর্নামেন্টের সবকটিতে ফাইনাল খেলেছেন। এর মধ্যে আছে পঞ্চম ইউএস ওপেন শিরোপা। ৩০ পেরিয়েও ফেদেরারের সমান ১৭তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা উইলিয়ামস বোনদের ছোটজন সবচেয়ে বেশি বয়সে এক নম্বর হওয়ার রেকর্ড গড়েন। মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট ডব্লুটিএ ট্যুর চ্যাম্পিয়নশিপসে জেতেন বছরের ১১তম শিরোপা। আর একটি হিসাব সেরেনার অসাধারণ পারফরমেন্সের অকাট্য প্রমাণ, ২০১৩ সালে ৮২ ম্যাচে জিতেছেন ৭৮টিতে!
মেয়েদের এককে বাকি থাকা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন মারিওন বারতোলি। উইম্বলডনে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ফরাসি তরুণী। কিন্তু চলতি বছর তিনি আলোচিত হলেন অন্য কারণে। একটিমাত্র এই শিরোপা জিতেই টেনিসের পথচলায় ইতি টানলেন ২৯ বছর বয়সী।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩
সম্পাদনা: ফাহিম হোসেন মাজনুন, নিউজরুম এডিটর