ঢাকা: ২০১৩ সাল মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার বছর। বছর জুড়েই হরতাল অবরোধের কারণে বেড়েছে পরিবহন খরচা।
দফায় দফায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম:
২০১৩ সালের জুন মাসেও দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। এর পর কয়েক দফায় বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।
পয়লা আগস্ট রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ৪৪ থেকে ৫০ ও আমদানি নির্ভর ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিলো।
কিন্তু ৮ ডিসেম্বর সেই পেঁয়াজ নগরীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে বিক্রি হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। একদিনের ব্যবধানে ৯ ডিসেম্বর পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। যদিও বর্তমানে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আবার কমে এসেছে। তবে পেঁয়াজের এই হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধি মানুষকে ভোগান্তি দেয় যথেষ্ট।
ইতোমধ্যেই কৃষকের ঘরে নতুন পেঁয়াজ ওঠায় ও ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নেয়ার কারণে দাম অনেকটাই কমে এসেছে পেঁয়াজের।
বর্তমানে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ ও দেশি নতুন পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ’
রাজনৈতিক অস্থিরতায় অস্থিতিশীল সবজির বাজার: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দফায় দফায় বেড়েছে সবজির দাম। এছাড়া বিশেষ মুহূর্তে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়েও সবজির দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রমজানের একদিন আগেই নগরীতে কাঁচা মরিচের কেজি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২শ’ টাকায়। এছাড়া ঈদুল আযহার আগেও কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায় নগরীতে। টমেটোর দামও পুরো রমজান মাস জুড়েই ছিলো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নভেম্বর থেকেই চড়া দামে বিক্রি হয়েছে সবজি। প্রতিকেজি শসা ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকা, লাউ ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে শীতকালীন সবজি চলে আসায় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই মানুষ এখন স্বস্তির সঙ্গে সবজি কিনতে পারছেন।
বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মূলা ১৫ টাকা, ওলকপি ১৫ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ঢ্যাড়স ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা ও লাউ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বছর জুড়ে স্থিতিশীল ছিল মাংসের দাম: ২০১৩ সালে মোটামুটি স্থিতিশীল ছিলো মাংসের দর। তবে রমজান ও কোরবানির ঈদের আগে গরুর মাংস ৩শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ সময়টা বাদ দিলে সারা বছরই প্রতিকেজি গরুর মাংস ২৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, খাসি ৫০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পরিবহন খরচায় বেড়েছে চালের দাম: ২০১৩ সাল রাজনৈতিক অস্থিরতার বছর। হরতাল ও অবরোধের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কারণে এ বছর পরিবহন খরচা কখনও কখনও তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আর পরিবহন খরচ বৃদ্ধির এই প্রভাব সব থেকে বেশি পড়েছে চালের দামের ওপর।
বর্তমানে নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রতিকেজি মিনিকেট ৫০, পাইজাম ৪০, গুটি চাল ৩৬, মানভেদে নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৬০, বিআর আঠাশ ৪২, স্বর্ণা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ময়মনসিংহের বিরই চাল ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বছর জুড়ে স্বস্তি দিয়েছে তেল, চিনি ও লবণ: বছর জুড়ে প্রায় স্থিতিশীল ছিল, সয়াবিন তেল, চিনি ও লবণের দাম। প্রতি লিটার সয়াবিন ১১৭ থেকে ১১৯ টাকা ও কোম্পানিভেদে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা ও খোলা চিনি ৪৫ টাকা দরে। প্রতিকেজি চিকন দানা লবন ২৫ ও মোটা দানা ১৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে আটা ও ময়দার দাম। ২ কেজি প্যাকেটজাত ময়দা ৪ টাকা বেড়ে ৭৬ ও ২ কেজি প্যাকেটজাত ময়দাকে ৯৬ টাকা প্রতি প্যাকেট দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চড়া ছিল আদার দাম: ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে চড়া ছিল চায়না ও দেশি আদার দাম। এখন প্রতিকেজি দেশি আদা ১২০ ও চায়না আদা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল ছিল রসুনের দাম: প্রায় সারা বছর জুড়ে স্থিতিশীল ছিল রসুনের দাম। তবে কোরবানির ঈদের আগে দাম কিছুটা বেড়েছিল। একমাস ধরে রসুনের দাম কিছূটা বাড়তি। বর্তমানে প্রতিকেজি দেশি রসুন ১১০ ও চায়না রসুন ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমেনি গুঁড়াদুধের দাম: বছর জুড়েই বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে গুঁড়াদুধের দাম।
২০১৩ সালের শেষ দুই মাসে হঠাৎ বেড়ে এখন প্রতিকেজি ডানো গুঁড়াদুধ ৬৮৫ থেকে ৬৯৫, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড) ৬৭০ থেকে ৬৭৫, ফ্রেশ ৫৫৫ থেকে ৫৬০ ও মার্কস ৫৫৫ থেকে ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চড়া ছিল ডালের বাজার: ২০১৩ সালে মশুর ডালের দাম চড়া ছিল। তবে এ বছর রমজানে ছোলার দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই ছিল। এখন প্রতি কেজি চিকন দানা দেশি মশুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫, মোটা দানা মশুর ডাল ৭৫ থেকে ৮০, নেপালি চিকন দানা মশুরডাল ১২০ থেকে ১২৫, মানভেদে মুগডাল ১১৫ থেকে ১২৫, ছোলা ৪৮ থেকে ৫০, অ্যাংকর ৪০ থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্বস্তি দিয়েছে ইলিশ মাছ: ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে অনেকটা সস্তায় বিক্রি হয়েছে ইলিশ মাছের দাম। প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। তবে প্রতি বছরের ন্যায় বৈশাখ সামনে রেখে হঠাৎ বেড়ে যায় ইলিশের দাম। যদিও এই মূল্য বৃদ্ধি হয় ক্ষণস্থায়ী।
অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের দাম হাতের নাগালের মধ্যেই থাকলেও নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মাসে নদীতে কম ইলিশ ধরা পড়ায় ইলিশের দাম বর্তমানে কিছুটা চড়া।
এখন রাজধানীর বাজারগুলোতে ৮শ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৫০০, ৭শ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ৭০০ ও ৫শ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৪
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর (অ্যাক্ট.)