ঢাকা: থ্রিজি সেবা মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো। একই সঙ্গে দেশ প্রবেশ করলো আধুনিকতর তথ্যকেন্দ্রিক যুগে।
মোবাইল খাতে থ্রিজি চালুর মাধ্যমে বিদায়ী বছরে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উম্মোচিত হলো নতুন দিগন্তের। শুধু চালু হওয়াই নয়, এরই মধ্যে সফলতার সঙ্গেই এই প্রযুক্তি সারাদেশে দ্রুততার সঙ্গে বিস্তৃত হচ্ছে।
২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের পরীক্ষামূলক যাত্রার মধ্য দিয়ে থ্রিজি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর নিলামের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে থ্রিজি অপারেশনের সুযোগ পায় চারটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল। থ্রিজির নীতিমালা অনুযায়ী অপারেটরেরা ১৫ বছরের জন্য লাইসেন্স পায়।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকরা ভিডিও কল করতে পারছেন। দেখতে পারছেন টেলিভিশন। সর্বোপরি, বর্তমানে গ্রাহকরা টুজি সেবার তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন। আর তাইতো চলতি ২০১৪ সাল হবে ই-কমার্সের বছর। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খুলে যাবে অবারিত দ্বার।
থ্রিজি নিলামে ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনে নেয় বাংলালিংক। বাংলালিংক ছাড়াও গ্রামীণফোন ১০ মেগাহার্টজ, রবি ও এয়ারটেল ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনে নেয়।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর থ্রিজি চালু করে গ্রামীণফোন। এর দুইদিন আগে থ্রিজির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে রবি। এরপর একে একে থ্রিজি চালু করে এয়ারটেল ও বাংলালিংক।
থ্রিজি চালু হওয়ার সঙ্গে আধুনিকতর প্রযুক্তিতে প্রবেশের পাশাপাশি গেল বছর থেকে দেশে শুরু হয়েছে এই খাতে বড় ধরনের একটি বিনিয়োগ। নিঃসন্দেহে এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তরুণদের জন্য খুলে গেল কর্মসংস্থানের একটি বিশাল জানালা।
গ্রামীণফোন থেকে শুরু করে প্রতিটি মোবাইল অপারেটর থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য শত শত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলেছে। থ্রিজি নিলামের মাধ্যমে সরকার এরই মধ্যে স্পেকট্রাম ফি হিসেবে ৪০৮১ কোটি টাকা আয় করে নিয়েছে।
থ্রিজি প্রযুক্তি খাতে রবি ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলালিংক থ্রিজি সেবার জন্য বাংলালিংক ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে উল্লেখ করেছে।
২০১০ সাল থেকে টুজি সেবায় দেশব্যাপী এয়ারটেলের কভারেজ এরিয়া ছিল ২৫ শতাংশ। আর বর্তমানে এই কভারেজ এরিয়া ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সময়কালে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। থ্রিজি সেবায় যতটা প্রয়োজন, ততটাই বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে এয়ারটেল।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ বলেছেন, থ্রিজি নিয়ে এখানে প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাংলাদেশকে সামনে গিয়ে নেওয়াই গ্রামীণফোনের মিশন।
গ্রামীণফোন প্রতিশ্রুতি ছিল, অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে গ্রাহকদের তৃতীয় প্রজন্মের তরঙ্গ সেবা দেবে। পরের মাসে নারায়ণগঞ্জে এবং মার্চের মধ্যেই প্রতিটি জেলায় এই সেবা পৌঁছে যাবে।
বিস্তৃত নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে একই ধরনের অঙ্গীকার করেছিল রবি। তারাও এ বছরের মধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও কুমিল্লা ও সিলেটে এ সেবা চালু করে। ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে ৩৫ শতাংশ থ্রি-জি সুবিধার আওতাভুক্ত হবে।
গ্রামীণফোন ও রবি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তারা অঙ্গীকার অনুযায়ী থ্রিজি নেটওয়ার্ক বিস্তারে কাজ করে। তুলনামূলকভাবে বাংলালিংক ও এয়ারটেল কিছুটা ধীরগতিতে এগোলেও বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই তারা নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।
এই সেবা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরো বেগবান করবে এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে মন্তব্য করেছেন থ্রিজি প্রযুক্তি সম্পর্কে তৎকালীন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর