ঢাকা: অর্থপাচারের মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন তারেক রহমান। তেমনি আদালত অবমাননা করে দণ্ড থেকে রেহাই পাননি খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকও।
বিদায়ী ২০১৬ সালজুড়ে এ রকম অসংখ্য রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের (এমপি) না থাকা, বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম সংশোধন এবং ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় রিমাণ্ড বিষয়ক রায়।
তারেকের দণ্ড
টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অর্থপাচারের মাধ্যমে দুর্নীতির এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের আপিলের শুনানি শেষে বিদায়ী বছরের ২১ জুলাই তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
দুই মন্ত্রীর দণ্ড
গত ০৫ মার্চ আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। একই অনুষ্ঠানে আদালতের সমালোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশের পর ০৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে তলব করেন আপিল বিভাগ। এ পরিস্থিতিতে দুই মন্ত্রীর পক্ষে ১৪ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশের জবাব দাখিল করা হয়।
দুই মন্ত্রী আদালতে হাজিরের পর শুনানি শেষে ২৭ মার্চ আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন সুপ্রিম কোর্ট। অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে অবশ্য দুই মন্ত্রী নির্ধারিত সময়েই জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।
এমপিরা সভাপতি হতে পারবেন না
ইচ্ছা পোষণ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং গভর্নিং বডির বিশেষ কমিটির বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন এক আইনজীবী। গত ০১ জুন আবেদন অনুসারে রায় দেন হাইকোর্ট।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের প্রেক্ষিতে ০৭ নভেম্বর হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর ফলে সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে বা হতে পারবেন না।
বিজিএমইএ ভবন
বিজিএমইএ ভবন নিয়ে ২০১০ সালের ০২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক 'নিউ এজ' পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসার পর রুল জারি করেন। এ রুলের শুনানি শেষে ২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল নিজ খরচে বিজিএমইএ’র ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদনের পর বিদায়ী বছরের ০২ জুন সে আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। ০৮ নভেম্বর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পরে এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ।
ষোড়শ সংশোধনী
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। এ রিটের ওপর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
গত ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।
৫৪ ও ১৬৭ ধারা
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে কয়েকটি সংগঠন। ওই রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ০৭ এপ্রিল কিছু নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর হাইকোর্টের রায় সংশোধন ও পরিমার্জন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন ২৪ মে খারিজ হয়ে যায়। পরে ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এতে রায়ে ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ১০ দফা এবং হাকিম, বিচারক ও ট্রাইব্যুনালের জন্য ৯ দফা গাইডলাইন রয়েছে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়েও সাত দফা নির্দেশনা দেন সর্বোচ্চ আদালত।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স
১০ নভেম্বর প্রকাশিত রায়ে রাষ্ট্রীয় পদ মর্যাদাক্রমের (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) ১০ পদে রদবদল করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রায়ে জেলা জজদের ষোল ক্রমে সচিবদের সমমর্যাদা এবং সতের ক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজদের রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাকি আটটি পদে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক সরকার পদক্রম পরিবর্তন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
যে আটটি পদে রদবদল করতে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে চার এ থাকা প্রধান বিচারপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমমর্যাদায় তিন নম্বরে, আট নম্বরে থাকা আপিল বিভাগের বিচারপতিদেরকে সাত নম্বরে, নয় নম্বরে থাকা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদেরকে আট নম্বরে, পনের নম্বরে থাকা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আট নম্বরে, তেরতে থাকা সংসদ সদস্য ও পনেরতে থাকা কম্পাট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল ও ন্যায়পালকে বার নম্বরে এবং পিএসসির চেয়ারম্যানকে ষোল থেকে পনের নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন.....
**আলোচনায় ‘দ্বৈত শাসনের’ ১১৬ অনুচ্ছেদ
**ছয়জনের ফাঁসির রায়, কার্যকর তিনটি
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
ইএস/এএসআর