ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

বছর জুড়ে আলোচনায় জঙ্গিবাদ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
বছর জুড়ে আলোচনায় জঙ্গিবাদ গুলশান হামলার ফাইল ছবি

বিদায়ী বছরের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ও বিক্ষিপ্ত হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো। ছোট ছোট হামলার পর বড় পরিসরে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। 

ঢাকা: বিদায়ী বছরের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ও বিক্ষিপ্ত হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো। ছোট ছোট হামলার পর বড় পরিসরে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা।

 নৃশংস এ হামলার মাধ্যমে আলোচনায় আসে জঙ্গি সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’। এর এক সপ্তাহ পর হামলা করে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।  

এ দুই ঘটনায় মোট চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন, আহত হন ৪০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য।

এরপরই রাজধানীসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে থাকা জঙ্গি আস্তানা ও নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতাদের খোঁজে অভিযান পরিচালনা করতে থাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রাজধানীর কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুরের রূপনগর, আজিমপুর, গাজীপুর, পাতারটেক, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়া এবং সর্বশেষ দক্ষিণখানের আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও ৠাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

দু’টি জঙ্গি হামলা এবং ৯টি জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ ৩৫ জঙ্গি নিহত হয়েছেন।  

পুলিশের কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জঙ্গিরা একটি ভ্রান্ত মতাদর্শ নিয়ে অবস্থান করছে। তাই তাদেরকে শুধুমাত্র গ্রেফতার বা জেল-সাজার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা জঙ্গিদের সক্ষমতা অনেকাংশে কমিয়ে ফেলতে পেরেছি’। শোলাকিয়া হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন দুই হামলাকারী
‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নেতৃত্বের সংকটে জেএমবি সম্প্রতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি অংশ ছোট-খাট নাশকতা করে সংগঠনটি সচল রাখতে চাইলেও আরেকটি অংশ চুপচাপ তাদের সাংগঠনিক ও আর্থিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে ২০১৬ সালের ০১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে।

ওই রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ‘হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে’ হামলা চালায় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা। সেখানে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে তারা।

জঙ্গিদের ছোড়া বোমা ও গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খান। পুলিশের সোয়াট টিমের ৬ জনসহ আহত হন ৩০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য।

পরদিন ভোরে যৌথবাহিনীর ১৩ মিনিটের কমান্ডো ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। যাদের একজন হলি আর্টিজানের শেফ সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন- রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।  

শোলাকিয়ায় হামলা
০৭ জুলাই ঈদের দিন সকাল ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা ও গুলি চালায় জঙ্গিরা।  

হামলাকারীদের ছোড়া বোমায় পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল হক (৩০) ও আনছারুল (৩৫) নিহত হন। ওই ঘটনায় হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। আরও দুই পুলিশ সদস্য, তিন পথচারীসহ অন্তত দশজন আহত হন।

পুলিশের গুলিতে হামলাকারী ও নব্য জেএমবির সদস্য আবির নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল (১৯) নামের এক হামলাকারীকে আহত অবস্থায় গ্রেফতারও করতেও সক্ষম হয় পুলিশ।

‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’
২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামে একটি বাসার পাঁচতলায় জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এক ঘণ্টার অভিযানে নিহত হন ৯ জঙ্গি।

নিহত জঙ্গিরা হলেন- আবদুল্লাহ, আবু হাকিম নাইম, তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান, সাজাদুর রউফ ওরফে সেজাত রউফ ওরফে অর্ক, মতিয়ার রহমান, জোবায়ের হোসেন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী কনিক ওরফে সাব্বির ও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

এ আস্তানায় বসেই হলি আর্টিজান হামলার পুরো ঘটনাটি মনিটরিং করেছেন নব্য জেএমবি’র নেতা মারজান। নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান

‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’
২৭ আগস্ট সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকার ‘দেওয়ান বাড়ি’তে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ অভিযানে নিহত হন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবি’র সদস্য ইকবাল ও মানিক।  

রূপনগর জঙ্গি আস্তানা
০২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের ৩৩ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ অভিযানে নব্য জেএমবি’র সামরিক কমান্ডার মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। রূপনগর থানার দুই ওসিসহ দু’জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

আজিমপুর জঙ্গি আস্তানা
১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে অভিযানে নব্য জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য তানভীর কাদেরি ওরফে শমসেদ ওরফে আবদুল করিম আত্মহত্যা করেন।

এ সময় তিন নারী জঙ্গি সদস্যকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।  

অপারেশন ‘স্পেইট-৮’
পুলিশের ‘স্পেইট-৮’ অভিযানে ‘নব্য জেএমবি’র ঢাকা জেলার কমান্ডার আকাশ ওরফে জাহাঙ্গীরসহ ১২ জঙ্গি নিহত হন।

০৮ অক্টোবর গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায় এসব অপারেশন পরিচালনা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানের পর পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে নিহত হন জঙ্গি নেতা আবদুর রহমান। গাজীপুরের হাঁড়িনালের পাতারটেকে জঙ্গি আস্তানয় অভিযানে র‌্যাবের গুলিতে ইব্রাহিম ও হাফেজ ছানাউল্লাহ নামের দুই জঙ্গি নিহত হন।

‘অপারেশন রিপল-২৪’
২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামে ১৬ ঘণ্টার অভিযানে নিহত হন দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে নারী জঙ্গি শাকিরা আত্মঘাতী হামলা এবং আজিমপুরে নিহত জঙ্গি নেতা তানভির কাদেরীর সন্তান আফিফ কাদেরী ওরফে আদর নিহত হন।  

এ পর্যন্ত এসব জঙ্গি আস্তানা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেসব অস্ত্র উদ্ধার করেছে তার সবগুলোর সঙ্গেই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এসজেএ/ এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।