বাকি সময়ে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে সবচেয়ে বড় মামলা পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের মামলা। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় রিভিউ খারিজ হওয়ায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
২ এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার দায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপের মৃত্যুদণ্ডসহ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খালাস পেলেও দণ্ডিত হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা। আলোচনায় ছিলো সুপ্রিম কোর্টের সামনে বসানো লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্যও।
নামজারি মামলায় হেরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে হারাতে হয়েছে বাড়ি। তবে ফাঁসির দড়ি থেকে রেহাই পেয়েছেন বাবা মায়ের হত্যাকারী ঐশী রহমান। পেয়েছেন যাবজ্জীবন সাজা। অবৈধ হয়েছে মোবাইল কোর্ট আইন। সেই সঙ্গে বিচারপতিদের অপসারণে আনা ষোড়শ সংশোধনীও।
তবে দীর্ঘদিন পরে ঐক্যমত্যে পৌঁছে জারি করা হয়েছে নিম্ন আদালতের শৃংঙ্খলা বিধির গেজেট।
বিচারপতি সিনহার পদত্যাগ
১১ নভেম্বর বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা ঘটলো। ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধের রায় প্রকাশের পর থেকে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন।
২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান বিচারপতি সিনহা। ওই ছুটির মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিচারপতি সিনহা।
ওই সময় তিনি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া থেকে কানাডা যাওয়ার পথে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর তার পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি সিনহা। পরের দিন সেটি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে পৌঁছায়।
এদিকে ১৪ অক্টোবর দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক বক্তব্যে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এরমধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।
সংবিধান অনুসারে ৩ অক্টোবর থেকে আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সাজার রায় বাতিল, এরশাদ খালাস
দুর্নীতির মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরশাদকে দেওয়া বিচারিক আদালতের তিন বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে ৯ মে এ রায় দেওয়া হয়।
ভাস্কর্যের স্থান পরিবর্তন
হেফাজতে ইসলাম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসারণ করে ২৫ মে দিবাগত মধ্যরাতে অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে বসানো হয়।
মোবাইল কোর্ট
১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত রেখেছেন।
বিশ্বজিৎ দাস হত্যা
পুরান ঢাকার টেইলার্স কর্মী বিশ্বজিৎ দাস হত্যার দায়ে ৬ আগস্ট আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ২১ আসামির মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। পলাতক বাকি ১১ আসামি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
নাজমুল হুদা
ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতির দায়ে ৮ নভেম্বর সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা কমিয়ে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তার স্ত্রী সিগমা হুদার কারাগারে থাকাকালীন সময়কে সাজা হিসেবে গণ্য করেছেন।
বিডিআর হত্যা মামলা
২৭ নভেম্বর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে হত্যাযজ্ঞের দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালেতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১ জন মারা গেছেন। বাকি ১২ জনের মধ্যে ৮ জনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রয়েছে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দু’জন আগেই মারা গেছেন। আর অন্য ১২ জন খালাস পেয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের সাজা চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর অন্য ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রয়েছে। সব মিলিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন ১৮৫ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
ইএস/জেডএম