বছরজুড়ে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে চাল ও পেঁয়াজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দু’টি পণ্যের দাম আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে।
চিনি
চিনির ঊর্ধ্বগতি শুরু হয় গত মে মাসের মাঝামাঝিতে। রমজান মাস সামনে রেখে শুরু হওয়া চিনির এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে ঈদুল ফিতরের পরেও। ফলে সারাদিন রোজা শেষে চিনি দিয়ে শরবত খেতে ৩৮ টাকার চিনি রোজাদারদের কিনতে হয় ৭০ টাকায়। যা পরবর্তীতে ২-৩ তিন মাস ভোগায় ক্রেতাদের।
টিসিবির তথ্য মতে, ঐ সময় একমাসের ব্যবধানে চিনির দাম প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছিল। রমজান, আমদানি কম ও দেশীয় উৎপাদন কমকে কারণ দেখিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল চিনির।
কিন্তু সমস্যা সমাধান হলেও চিনি কিনতে ক্রেতাকে এখনও একশ’ টাকার নোটের অর্ধেকের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। বছর শেষে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
সবজি
মে মাস অর্থাৎ রমজানের শুরু থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা সবজির দাম আরেকধাপ বাড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায়। তবে বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকরা নতুন করে সবজি চাষ করলে অকাল বৃষ্টিপাতে তা নষ্ট হলে সবজির দাম আরেকধাপ বাড়ে। এ পর্যায়ে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম পৌঁছে ২৬০ টাকায়। এছাড়া ৬০ টাকা কেজির নিচে মিলতো না কোনো সবজিই।
কিন্তু সবজির দামের এমন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের তেমন কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়েনি।
চাল
চালের বাজারে অস্থিরতা বছরের শুরুতেই আঁচ পাওয়া যায়। মিল মালিকদের কারসাজি, বন্যা, অতি বৃষ্টি, আমদানিগত সমস্যার কারণে বাড়তে থাকা চালের দাম এখনো বাড়ছেই। বছরের শুরুতে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চাল পৌঁছে ৫০ টাকায়। এছাড়া ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট ও নাজিরশাইল বেড়ে বিক্রি হয় ৬৫-৭০ টাকায়।
আর বছর শেষে খুচরা বাজারের তথ্যানুযায়ী কেজিপ্রতি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, মিনিকেট ৬৫ টাকা, বিআর-২৮ ৫৫ টাকা, পারিজা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজারে কার্যত এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। কুষ্টিয়ার চালের মিল মালিক রশিদকে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন মিলে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ চাল জব্দ ছাড়াও চালের উপর আমদানি কর কমানো হয়।
এসব পদক্ষেপে সপ্তাহ খানেকের জন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সপ্তাহ না ঘুরতেই পুরনো অবস্থায় ফেরে চালের বাজার। দেশের বাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মূল্যে চাল বিক্রি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষরা।
পেঁয়াজ
২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলো পেঁয়াজ। পেঁয়াজের মূল্যের ঝাঁজ বার বার পানি এনেছে ক্রেতাদের চোখে। ২৫-৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম পৌঁছেছে শ’ টাকায়। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড।
উৎপাদন কম ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে যান ১৪০ টাকা কেজি পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশীয় বাজারে সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা ছিলো কৌশল।
বছরের শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজের আমদানি ঘটলেও তেমন একটা প্রভাব দেখা যায়নি পেঁয়াজের দরে। সবশেষ খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতার বলছেন, পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখের পানি নিয়েই বছর শেষ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এর বাইরে অন্যসব পণ্যের দরে ক্রেতাদের যে খুব একটা স্বস্তি ছিলো তা কিন্তু নয়। আসছে সময়ে পণ্যের দাম কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে তা এখন দেখার অপেক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএসি/জেডএস