বিদায়ী বছরে সুখকর ঘটনায় পুলকিত হওয়ার চেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জেলাবাসীর হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে বার বার। অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে কক্সবাজারের চিত্র পাল্টালেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মাদক পাচার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারণে বার বার ভারাক্রান্ত হয়েছে জেলার লোকজন।
প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু থেকেই ইয়াবা পাচার, সড়ক দুর্ঘটনা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে এ বছর জেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম রোহিঙ্গা। ২০১৬ সালের শেষভাগে শুরু হয় এই জেলায় রোহিঙ্গা প্রবেশ। চলতি বছরের মধ্যভাগে কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও ২৫ আগস্টের পর থেকে আবারো শুরু হয় রোহিঙ্গা প্রবেশ। যা চলছে এখনো। এ নিয়ে বিশ্বজুড়েই চলেছে বন্দনা। তবে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার কারণে নষ্ট হয়েছে জেলার পাহাড়, নদী, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যখাত।
এক সময় মানবপাচারের কারণে সমালোচিত কক্সবাজার এ বছর ইয়াবার কারণে সমালোচিত ছিল। প্রতিমাসেই কয়েক দফা সড়ক দুর্ঘটনায় শিরোনাম হওয়া এ জেলার এ বছরের নতুন ভোগান্তির নাম যানজট এবং ভাঙ্গা সড়ক। মহেশখালিতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকাকে ছুরিকাঘাত, দু’টি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা, সেনা বাহিনীর হাতে চাঁদাবাজীর টাকাসহ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাত (ডিবি) সদস্য গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে পুলিশের হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনা ভোলেনি জেলার জনগণ।
এদিকে, জেলায় বেড়েছে গরু চুরি, ছিনতাই ও অপহরণের মতো ঘটনা। অন্যদিকে, এক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দফা এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এক দফা কক্সবাজার সফরে আনন্দে ভেসেছে জেলাবাসী।
বাঁকখালী নদী খননে যেমন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে তেমনি পাহাড় আর গাছ কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন জেলা কক্সবাজার। এ বছরে শহরবাসীর সবচেয়ে বড় পাওয়া অবৈধভাবে নালার ওপর নির্মিত কয়েকটি ভবন উচ্ছেদ। যদিওবা শহরবাসীর কামনা ছিল সব অবৈধ ভবনই উচ্ছেদ করা হবে। তারপরও কয়েকটি ভবন উচ্ছেদকে যেমন স্বাগত জানিয়েছেন তারা; তেমনি মশা আর আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে পৌরসভার মেয়রকে ভৎসর্না করতেও ছাড়েনি। বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিণ ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনে জেলাবাসী যেমন আপ্লুত হয়েছিল তেমনি ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলের অনুমতি না মেলায় তারা নাখোশ।
হারানো মালপত্র খুঁজে দেওয়া, হারিয়ে যাওয়া শিশুকে বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেওয়া ও পর্যটকদের উদ্ধার করে যেমন প্রশংসিত হয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ তেমনি বছরের শেষভাগে এসে পর্যটক দম্পত্তির কাছে কাবিননামা চেয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে সংস্থাটি।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের যাত্রা শুরুর মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে জেলাবাসী এগিয়ে গেলেও চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু, ভুল চিকিৎসা এবং সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনাও কম হয়নি।
বিমানবন্দর থেকে দুই দফা অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধারের ঘটনা নিজের চোখে দেখতে যেমন বহু লোকের ভীড় জমেছিল তেমনি মহেশখালিতে দুর্ঘটনায় ভূপাতিত বিমানের পাইলটদের উদ্ধারেও পিছিয়ে যায়নি এই জেলার লোকজন।
রোহিঙ্গাদের কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধের বিষয়টি ছিল সমালোচিত। কোচিং সেন্টারের কারণে সারা বছরই সমালোচিত ছিল শহরের কয়েকজন শিক্ষক। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে যেমন দিনে দিনে উন্নত জেলায় পরিণত হচ্ছে কক্সবাজার তেমনি পরিবেশও ধ্বংস হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সরকার পাল্টে দিচ্ছে এ জেলার চিত্র। তাতে খুশি কক্সবাজারের আপামর জনতা। তবে নাখোশ, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। এসব প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির সঙ্গে রয়েছে অনেকের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার অমিল। ঘটনা যাই ঘটুক আপনগুণে ২০১৭ সাল কারো জীবনে হয়ে থাকবে চিরস্মরণীয় আর কেউ চাইবে ভুলে যেতে।
এ জেলার মানুষ স্বপ্ন দেখে বন্ধ হবে ইয়াবা পাচার, ফিরে যাবে রোহিঙ্গারা, রোধ হবে ছিনতাই আর অপহরণ। পুলিশ, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সর্বস্তরের মানুষ সততার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে আসছে বছরে। পর্যটন শহর আবারো পরিণত হবে স্বাস্থ্য নগরীতে, পাহাড় ফিরে পাবে আপন সৌন্দর্য, শিশুদের জন্য গড়ে উঠবে পার্ক এমন কামনায়ই জেলাবাসী বিদায় জানাচ্ছে ২০১৭ সালকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
টিটি/এসআই