বছরের শেষ দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ফলে ওমান সাগরে তেলবাহী জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা হয় সৌদি আরবের আরামকোর তেল শোধনাগার ও তেলক্ষেত্রে।
ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলা
অন্য অনেক শুক্রবারের মতো ১৫ মার্চেও জুমার নামাজ আদায় করতে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন মুসল্লিরা। এটাই হয়ে গেলো ওই মসজিদে জড়ো হওয়া অনেকের জীবনের শেষ জুমার নামাজ! নামাজের সময় মসজিদটিতে এক অস্ত্রধারী হামলা করে বসেন। কাছাকাছি সময়ে হামলা করা হয় একই শহরে অবস্থিত লিনউড ইসলামিক সেন্টারেও। এ ঘটনায় মুসল্লিসহ প্রাণ হারান ৫১ জন। আহত হন আরও ৪৯ জন। অভিযুক্ত অপরাধী, অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা হয় হত্যার অভিযোগ।
আল নূর মসজিদ ছিল সেদিন হামলার প্রধান টার্গেট। ছবি: সংগৃহীত
অনুশীলনের ফাঁকে সে দিন নিউজিল্যান্ডে সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরাও আল নূর মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন। পথের মধ্যে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে তারা রক্ষা পেয়েছেন। বড় ধরনের দুসংবাদের হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশও।
দেশটির অস্ত্র আইন সংশোধনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এ ঘটনা শক্ত হাতে সামাল দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন।
ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় হামলা
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই পরের মাসেই ঘটে আরও একটি নৃশংস ও রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা। শ্রীলংকায় ইস্টার সানডেতে গির্জা ও হোটেলে হওয়া এ হামলায় প্রাণ হারান ৩ শতাধিক মানুষ। আহত হন আরও প্রায় ৫শ’ এর মতো। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বহু বিদেশি নাগরিক।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গীর্জা। ছবি: সংগৃহীত
কর্তৃপক্ষ এ হামলার জন্য ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত বা এনটিজে নামক একটি জিহাদি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে।
ওমান উপসাগরে তেলবাহী জাহাজে হামলা
বিশ্বব্যাপী তেল পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ ওমান উপসাগর। এটা হরমুজ প্রণালী হিসেবে পরিচিত। নানা ঘটনার কারণে বছরজুড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে এটি। ইরান বারবার হুমকি দিয়ে আসছিল দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা প্রথমে হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন বন্ধ করে দেবে। পরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাপনা এবং লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হবে।
তেলবাহী জাহাজে হামলা। ছবি: সংগৃহীত
কথার লড়াইয়ের মধ্যেই ১২ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ওমান উপসাগরে ৪টি তেলবাহী জাহাজে হামলা হয়। এ ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র তোপ দেগে যাচ্ছিল অনবরত। এরমধ্যেই জুনে ওমান উপসাগরে ফের হামলার শিকার হয় আরও ২টি তেলবাহী জাহাজ। এ হামলার পেছনেও ইরানকে দায়ী করে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জোরদার করা হয় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ইরান এ হামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে।
এসব হামলাকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র হামলার পেছনে ইরান দায়ী এমন তথ্য হাজির করলেও বিশ্বের বহু দেশ তা খারিজ করে দেয়। এ যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র সুবিধা করতে পারেনি। বড় ধরনের সামরিক সংঘাত থেকে বিশ্ব রক্ষা পেলেও হামলার পেছনে মূলত কারা রয়েছে তা রয়ে গেছে রহস্য হয়ে।
সৌদি আরবের আরামকো তেলক্ষেত্রে হামলা
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে আগ্রাসন শুরু করে। এরপর থেকে দেশটিতে লাখ লাখ লোক বস্তুচ্যুত হয়েছেন। নিহত এবং আহতের সংখ্যা অগুনতি। দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্ভিক্ষ।
২০১৯ সালে এসে ইয়েমেন সংকট ভিন্ন মোড় নেয়। ইরান সমর্থিত হুথি আন্দোলন সৌদি আরবের ভেতরে হামলা জোরদার করে। ধারাবাহিকভাবে সৌদি আরবের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা এবং বিমানবন্দরে হামলা চালানো শুরু করে তারা। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় খাতের প্রতিষ্ঠান আরামকো পরিচালিত দুটি তেল শোধনাগারে হামলা বিশ্বকে অবাক করে দেয়।
সৌদি আরবের আরামকোর তেলক্ষেত্রে রহস্যপূর্ণ হামলা। ছবি: সংগৃহীত
দেশটির আবাকাইক শহরে আরামকোর বৃহত্তম তেল শোধনাগার প্রকল্পে এবং খুরাইস তেলক্ষেত্রে ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করে ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইয়েমেনের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র এমন হামলা চালাতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানান বিশ্লেষকরা। ফলে এবারও হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় ইরানের ওপর। এ হামলার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অব্যাহতভাবে অস্বীকার করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের দায় চাপানোর চেষ্টা, হুথি আন্দোলনের দায় স্বীকার ছাপিয়ে হামলার পেছনে আসলে কে তা রহস্য হয়েই থাকলো!
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এইচএডি/এজে