ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীর বিদায় ছিল আলোচনায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীর বিদায় ছিল আলোচনায় ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীর বিদায় ছিল আলোচনায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কালের অমোঘ নিয়মে বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল ২০১৯। বিভিন্ন ইতিবাচক-নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের শিরোনাম হয়ে এবছর দেশের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। অনেক যাছাই-বাছাইয়ের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়। নেত্রীর পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বারবার পরিচয় দিয়ে ছাত্রলীগের এই দুই নেতা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ছাত্রলীগের সোনালি ইতিহাসে যেভাবে তারা নেতৃত্বে এসে আলোচনায় ঝড় তুলেছিলেন, তেমনি বিদায় ঘণ্টা বেজেছে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৬৮-৬৯ সেশনে সভাপতি আব্দুর রউফ, ১৯৮৮-৯২ সেশনে হাবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯৭০-৭২ সেশনের শাহজাহান সিরাজ, ১৯৭৩-৭৪ সেশনের শফিউল আলম প্রধান বহিষ্কৃত হন। কিন্তু অতীতের সবকিছুকে ছাপিয়ে ২০১৯ সালে এক কমিটির সভাপতি-সম্পাদক পদে বাদ পড়েন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী।

 

সংগঠনে সমন্বয়হীনতা, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়া, মধুর ক্যান্টিনে সময় কম দেওয়া, দফতর সেল, পদবঞ্চিতদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিতর্কিত হয়েছেন তারা। সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ থেকে চাঁদা দাবির বিষয়টি সামনে আসে। আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিশন দাবি করা হলেও সেপ্টেম্বরে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এক সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এসময় উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ও গোলাম রাব্বানী পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন। এক পর্যায়ে চাঁদা দাবির বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন গোলাম রাব্বানী। তিনি এটিকে ঈদের খরচ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

সপ্তাহব্যাপী বিষয়টি টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও শোভন-রাব্বানীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকেন। বাতিল করা হয় গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস। প্রধানমন্ত্রী তাদের দু’জনকে মনস্টার হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ১৪ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোভন-রাব্বানীকে বাদ দিয়ে ১নম্বর সহ-সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানান। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোলাম রাব্বানীর শাস্তি চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সিনেট সদস্য থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয় প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো থেকে। ডাকসু থেকে মনোনীত ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করলেও সে পথে হাটেননি ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। তিনি ডাকসুর পদ ব্যবহার করে কোনো দুর্নীতি করনেনি বলে দাবি করেন। দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থাকার পর ক্যাম্পাসে আসেন তিনি।

চাঁদা দাবির বিষয় ছাড়াও সম্মেলনের ১০ মাস পর গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। রাজনীতির আঁতুড়ঘর মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিত নেতাদের মারধর করা হয় দুই দফায়। দফতর সেলও সমালোচনায়। প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিতদের বাদ দিতে বললেও এ বিষয়ে বিস্তারিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পোস্টার ছাপানো, পার্টি অফিস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনে নির্ধারিত সময় উপস্থিত না থাকাও শোভন-রাব্বানীকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়। ১১১টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র দুই ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সাবেকদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার কারণে অনেকে এদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এছাড়া আর্থিক বিষয়কে কেন্দ্র করে মল চত্বরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি সংগঠনের নেতৃত্বকে ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
এসকেবি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।