ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্তের শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসির উদ্দিন (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত নাসির একই উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৭ মে রাতে মহেশপুর সীমান্তের শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন বাংলাদেশি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে নাসির গুরুতর আহত হন। পরে স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে গোপনে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিন পর বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নাসিরের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন—পদ্মপুকুর গ্রামের বর্ডার রিপন ও অনন্তপুর গ্রামের সোহাগ—ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন। তবে তারা গোপনে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নাসিরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেননি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আড়াল করে রাখা হচ্ছে। ’
নিহতের প্রতিবেশী ও শ্যামকুড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহানুর রহমান বলেন, নাসির মারা গেছেন, এটা ঠিক। কিন্তু কীভাবে মারা গেছেন, সেটা আমাদের স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তাকে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য ফেরদৌস খান বলেন, বিএসএফের গুলিতে নাসির নিহত হয়েছেন—এমন কথা পরিবারের কেউ স্বীকার করেননি। যদিও এলাকাবাসীর অনেকে বলছেন, বিএসএফের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।
মহেশপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্য পাঠিয়েছি। তবে পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি বা গুলির বিষয়টি স্বীকার করেনি।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসেও একই সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আরও দুই বাংলাদেশি নিহত হন। ১১ এপ্রিল বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিম ও ২৭ এপ্রিল গোপালপুর গ্রামের ওবাইদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। দেড় মাস পার হলেও তাদের মরদেহ এখনও দেশে ফেরত আসেনি।
বিজিবি সূত্র জানায়, ওই দুজনের মরদেহ বিএসএফ ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ফলে কূটনৈতিক জটিলতার কারণে মরদেহ ফেরতের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
এসআরএস