জমে উঠেছে মাদারীপুরের কোরবানির পশুর হাট। জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী হাটও বসানো হয়েছে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে গরুর চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছাগলের দাম কিছুটা বেশি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) জেলার উৎরাইল হাটে দেখা গেছে এই চিত্র। এর আগে গতকাল সোমবার (২ জুন) নিলখী বন্দর পশুর হাটেও গরু-ছাগল বিক্রিতে দাম ভালো ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের ৫টি উপজেলায় অনুমোদিত হাটের সংখ্যা ২৬টি। জেলার কোরবানির ৬৭৮৭৬ চাহিদার বিপরীতে ৭৪৬৫০ পশু রয়েছে খামারগুলোতে। কোরবানীর হাট ধরতে শেষ সময়ে খামারগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। খামারিদের প্রত্যাশা হাটে এবার গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া গেলে বিগত দিনের লোকসান ওঠে আসবে। জেলার সদর উপজেলার মাদারীপুর সদর, মোস্তফাপুর, হবিগঞ্জ, রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট, কবিরাজপুর, রাজৈর, কালকিনির ভুরঘাটা, পৌর হাট, শিবচরের চান্দেরচর, উৎরাইল, মাদবরেরচর, পৌর হাট, কুতুবপুর, বাংলাবাজার, নিলখী বন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী হাটের পাশাপাশি রয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এসব হাটে বিক্রি হবে কোরবানির পশু।
উৎরাইল হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা বলেন, 'তিনদিন পরেই ঈদ। এখন গ্রামের যারা কোরবানি দেবেন তারা গরু-ছাগল কিনবেন। তাছাড়া ব্যাপারীরাও হাট থেকে গরু-ছাগল কিনে ঢাকার বিভিন্ন পশুর হাটে নিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার থেকে হাটে বেচাকেনা বাড়বে। হাটে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। দামও সঠিক পাওয়া যায়। '
মো. জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় এক খামারি বলেন,'কৃষিকাজের পাশাপাশি প্রতি বছরই ৫/৬টি গরু লালনপালন করি। আজ হাটে যে গরু এনেছি সেগুলো ৬ থেকে ৭ মণ ওজন হবে একেকটির। দাম ভালো পেলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। '
ফররুখ আহমেদ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, 'উৎরাইল হাটে সারা বছরই গরু-ছাগল বিক্রি হয়। কুরবানি উপলক্ষে এই হাটে প্রচুর গরু-ছাগল বিক্রি হয়। আমি ৩টি গরু এনেছি। দরদাম চলছে। এখনো বিক্রি হয়নি। '
আরেক ব্যক্তি আব্দুর রশিদ বলেন, 'দাম মোটামুটি ভালোই। বাজার গতবারের তুলনায় এখন পর্যন্ত ভালো মনে হচ্ছে। হাটে গরু এনেছি। গরমে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাতাস দিতে হচ্ছে। '
মো. মিজান নামে এক কৃষক বলেন, 'খাসির দাম ভালো যাচ্ছে। গতবার কম ছিল। এ বছর ভালো দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমি তিনটি খাসি এনেছি। দুটি বিক্রি হয়েছে। '
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, 'কৃষি কাজের পাশাপাশি প্রতি বছরই কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করা হয়। একটি গরুর পেছনে অনেক খরচ হয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি বর্তমানে। কোরবানির সময় দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর দাম ভালো পেলেই আমাদের কষ্ট সার্থক এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবো। '
গরু কিনতে আসা একাধিক ব্যাপারী বলেন, 'আমরা হাট ঘুরে ঘুরে গরু কিনতেছি। ঢাকায় নিয়ে যাবো। গ্রামে বাজার একটু চড়াই মনে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি একইসঙ্গে গরমের তীব্রতা বাড়ছে। পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছি। '
এদিকে শিবচর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর শিবচরের ৭৭২টি খামারে ১০ হাজার ৯৭০টি গরু এবং ১০ হাজার ৭৭০টি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বিপরীতে গরুর চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৮৫০টি এবং ছাগলের চাহিদা ১০ হাজার ৩৫০টি। এ বছর উপজেলায় উদ্বৃত্ত থাকছে মোট ১ হাজার ৫৪০টি পশু। এছাড়াও সাধারণ কৃষকেরা কোরবানির জন্য আলাদাভাবে গরু/ছাগল বড় করেছেন। যেগুলো স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হরিশ চন্দ্র বোস বলেন, 'উপজেলা অনুমোদিত মোট ৬টি হাট রয়েছে। সেখানে আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক থাকছে।
এছাড়াও খামারিদের সার্বক্ষণিক আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। গরমে পশুর জন্য সতর্ক থাকতে হবে খামারিসহ ব্যবসায়ীদের। আমাদের টিম হাটগুলোতে পশুর সেবায় নিয়োজিত থাকছে। '
আরএ