ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সেতু হয়েছে, চার বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১১, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
সেতু হয়েছে, চার বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক! সংযোগ সড়ক নেই সেতুর

একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার যমুনাপারের অবহেলিত ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে হেঁটেই শহর-বন্দরে যাতায়াত করতে হতো এখানকার মানুষদের।

তাদের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করে।

সেতুটি ঘিরে নদী বিধৌত প্রান্তিক মানুষগুলো নানা স্বপ্ন দেখতে থাকে, উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই শহরে-বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্যে বেঁচবে। ছেলে-মেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করবে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতলে যেতে আর কষ্ট হবে না- এমন হাজারো স্বপ্ন বুনতে থাকে তারা।  

কিন্তু সেতুটি নির্মাণের চার বছরেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। সোয়া ৬ কোটি টাকার সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসেনি।  

স্থানীয়রা জানায়, যমুনার এই ক্যানেলটি পার হয়ে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের দেলুয়া, চর দেলুয়া, মধ্য দেলুয়া, রতনকান্দি, সোহাগপুর, বড়ধুলসহ অন্তত ৮/১০ গ্রামের ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করে। বর্ষাকালে নৌকা আর পানি কমলে বাঁশের সাঁকো এবং শুকনো মৌসুমে হেঁটে চলতে হতো। অসুস্থ রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতো। এলাকার কৃষিপণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় ও টাকা অপচয় হতো। চার বছর আগে এখানে সেতু নির্মাণের নতুন স্বপ্ন দেখে প্রান্তিক এইসব মানুষগুলো।

কিন্তু চার বছরেও সেতুর উভয় পাশে রাস্তা না হওয়ায় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ চরম ক্ষুব্ধ।  

তাঁতশ্রমিক শাহীন আহমেদ বলেন, এই জায়গায় ব্রিজ ছিল না, যখন ব্রিজের কাজ শুরু হলো মানুষ খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু দেড় দুই বছর ধরে ব্রিজ এই অবস্থায় পড়ে আছে। ব্রিজ আছে রাস্তা নেই। এলাকায় লোকজন নেই দেখে সরকার দেখবে না তা হবে না। ঠিকাদাররা শুধু ব্রিজ করে টাকা নিয়ে গেছে। এই এলাকায় পৌরসভা থেকে শুরু করে যমুনার ওপার থেকেও লোক এখান দিয়ে চলাচল করে। আমরা পৌরসভাকে ট্যাক্স দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন নেই। আমাদের বের হওয়ার রাস্তাঘাট নেই। আমরা ট্যাক্স দেব কেন। এখানে ব্রিজ অনুযায়ী রাস্তা হোক।  

দেলুয়া মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুর রশিদ বলেন, সড়কটা হলেই ২০/৩০ হাজার মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে। এখানে যাদের জমি পড়েছে তাদের পয়সাপাতি দিলেই তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। এর জন্যই রাস্তাটি ঠেকে আছে।  

সালেহা বেগম নামে এক পথচারী বলেন, এই ব্রিজে হেঁটে পার হওয়া ছাড়া কোনো উপকার হয় নেই। আশপাশে রাস্তা নেই। মেইন রাস্তাই যদি না থাকে তাহলে ব্রিজ দিয়ে কি হবে। তিন বছর ধরে মই দিয়ে সেতুতে উঠেছি।  

আব্দুল আলীম নামে এক শিক্ষক বলেন, প্রথমে ঠিকাদার মাটি ফেলেছিল। সেগুলো ধুয়ে গেলে, এলাকার মানুষ আবার মাটি ফেলে হাঁটার মতো রাস্তা তৈরি করেছে। কিন্তু এখানে সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।  

ঝালমুড়ি বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই গরিব। পানির দিনে আমাদের যাওয়ার অসুবিধা, একজন মারা গেলে নৌকা ছাড়া লাশ কবরস্থানে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। সবার সুবিধার জন্যই এই ব্রিজটা হইচে। ব্রিজ থেকে এক কিলোমিটার দূরে হেঁটে আমার বাড়ি যাওয়া লাগে। রাস্তা হলে চর এলাকার সবার সুবিধা হবে।  

বেলকুচি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে যমুনা নদীর ক্যানেলের ওপর চরদেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-বক্কার প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৬ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৩২ মিটার চেইনেজ ৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গাডার সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মঈনুদ্দিন বাঁশি লিমিটেড। ২০২১ সালের মার্চ মাসে এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতুটির মূল কাঠামো নির্মাণ হয়। তবে চার বছরেও সেতুটির এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ হয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির অধিগ্রহণ না করায় এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে পারছে না এলজিইডি।  

উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, দেলুয়া ব্রিজটির স্ট্রাকচারাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ্যাপ্রোচ রোডটা ঠিকাদারের কন্ট্রাক্টে ধরা ছিল। ঠিকাদার যথারীতি কাজ শুরু করার পরে আশপাশের যেসব স্থাপনা রয়েছে বা জমি রয়েছে তারা বাঁধা দেয়। যে কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিই। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অনেকটা শেষের দিকে। অধিগ্রহণ শেষ হলে বাকি কাজটা ঠিকাদার করে দেবে। এ্যাপ্রোচ রোড থেকে একটি রাস্তা পরবর্তী ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।