চাঁদপুরে ‘অর্পণ’ নামে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ওই কেন্দ্রে থাকা রোগীদের পাঠানো হয়েছে পরিবারের জিম্মায়।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, অর্পণ নামে এই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তার ধারাবাহিকতায় ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে অসন্তুষ্ট রোগীরা বিক্ষোভ করে, ভাঙচুর চালায় এবং কর্মকর্তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অনেক রোগী দেয়াল টপকে পালিয়েও যায়। ফলে গভীর রাতে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে।
এদিকে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়ার পর রোগীদের নিরাপত্তা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছিল। আর বেশ কিছু পরিবারও নিজেদের প্রিয়জনকে ফেরত নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এমনকি কয়েকজন মায়েরাও সন্তান নিতে আসতে দ্বিধা করেন। তবুও হাল ছাড়েননি চাঁদপুরের ডিএনসি কর্মকর্তারা। রোগীরা যাতে পথে না বসে যায় বা নতুন করে মাদকাসক্ত না হয়ে পড়ে, এই চিন্তায় একে একে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কর্মকর্তারা। গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি রোগীর পরিবারের জিম্মায় তুলে দিতে সক্ষম হন।
সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান বলেন, তারা হয়তো মাদকাসক্ত, কিন্তু তারাও তো মানুষ। পরিবার ছাড়া তারা কোথায় যাবে? আমাদের কষ্ট হলেও রোগীদের নিরাপদে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি, এটাই তৃপ্তির বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এ জেলায় আমার যোগদানের আহে অর্থাৎ ২০২৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন পায়। আমি এসে প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থপনা লক্ষ্য করি। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বারবার এসব বিষয়ে সর্তক করি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ও রোগীদের মানোন্নয়নে সিসিটিভি ক্যামেরা, বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও খাওয়া-দাওয়ার চার্টও করে দেওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেই এবং প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন করি।
রোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা খাবারের অনিয়ম, অমানবিক আচরণ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। তাই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ওই রাতে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, মানবিকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডিএনসি চাঁদপুর দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ তারা প্রত্যেকটি রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অভিভাকের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এসআরএস