ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ‘তথ্য গোপন’ করে নীতিমালা পরিপন্থিভাবে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এক ডিলারের বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে।
স্থগিত হওয়া ওই ডিলারের নাম অনিক শেখ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে লটারির মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি রাসেল ইকবাল। এ সময় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১২টি বিক্রয়কেন্দ্রের জন্য ২৩ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১১ জন ডিলার চূড়ান্ত করা হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রার্থীদের যোগ্যতা বিবেচনা করে নীতিমালার আলোকে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সুপারিশক্রমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গোপালপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ইউনিটের কুচিয়াগ্রাম বাজার বিক্রয়কেন্দ্রের জন্য আবেদন করেছিলেন দুজন- মো. অনিক শেখ ও মো. আরিফুজ্জামান।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার অনিক শেখের নামে একই এলাকার মৃত নান্নু মিয়ার ছেলে ও অপর আবেদনকারী মো. আরিফুজ্জামান জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগে তথ্য গোপনের বিষয় উল্লেখ করে তদন্তসাপেক্ষে অনিক শেখের ডিলারশিপ বাতিলের আবেদন জানান।
অভিযোগে মো. আরিফুজ্জামান উল্লেখ করেন, অনিক শেখ ব্যবসায়ী নন। চাল রাখার জন্য যে ঘর তিনি দেখিয়েছেন, সেটি ইউনিয়নের বাইরে পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত এবং আকারে ছোট-যেখানে ১৫ মেট্রিক টন চাল সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তিনি যে দোকানঘরের দলিল দাখিল করেছেন, সেটি তার বাবার নামের জমির দলিল। সেখানে কোনো চুক্তিপত্র বা ওয়ারিশ সনদ দাখিল করা হয়নি। এভাবে তথ্য গোপন করে পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দাখিল করেছেন, যা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিধিবহির্ভূত। ফলে তার ডিলারশিপ বাতিলযোগ্য।
এ অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে। তিনি গত ৬ অক্টোবর সরেজমিন তদন্ত করেন।
জানতে চাইলে ডিলারশিপ পাওয়া অভিযুক্ত অনিক শেখ বলেন, তথ্য গোপনের বিষয়টি সঠিক নয়। গোপালপুর ইউনিয়নে আমার বড় ঘর রয়েছে, তবে ভুলবশত পৌরসভার জায়গার দলিল জমা দেওয়া হয়েছে। এটা একটা ভুল। তদন্ত হয়েছে, ভুলটি মার্জনার দৃষ্টিতে দেখা হলে আমার ডিলারশিপ থাকবে।
নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটি রাইস মিলও আছে। ’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার (১৩ অক্টোবর) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। গোপালপুর ইউনিয়নের মধ্যেও অনিক শেখের ঘর রয়েছে। তবে ডিলারশিপের জন্য তিনি যে ঘর দেখিয়েছেন, সেটি পৌরসভার মধ্যে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সদস্য সচিব ধনঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
তিনি দাবি করেন, আবেদনকারীদের জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কালে কোনো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।
আলফাডাঙ্গা ইউএনও ও উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি রাসেল ইকবাল বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ওই ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
এসআরএস