গ্রামীণ নারীর জীবনমান উন্নয়নের টেকসই পদক্ষেপ
দক্ষিণ উপকূলের অতিদরিদ্র অসহায় পরিবারের নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশসেরা সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিনামূল্যে তিন মাস সেলাই ও কাপড় কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলার আমতলী এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা শাখা বসুন্ধরা শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবকরা অসচ্ছল পরিবারের ৩০ জন নারীকে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করেন। একজন দক্ষ নারী প্রশিক্ষক দিয়ে তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে যখন দিশাহারা হয়েছিলেন এই নারীরা, তখনই বসুন্ধরা গ্রুপ সহায় হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে সহানুভূতির হাত। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হন সবাই।
কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের রাশিদা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বহুভাবে প্রতারিত হয়েছি। ক্লান্ত, রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিরুপায় হয়ে বসে ছিলাম।
কী করব, কী খাব চিন্তা করে যখন অস্থির হয়ে পড়ি, তখন কলাপাড়া শুভসংঘের কয়েকজন আমায় খুঁজে বের করে স্বাবলম্বী করার জন্য। আমাকে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করে নেয়। সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ এবং নতুন মেশিন পেয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে পেয়েছি। অনেক প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করে। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছে।
তাদের কল্যাণেই দরিদ্র অসহায় মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আমরা ৩০ জন অসহায় নারী জীবনসংগ্রামে জয়ী হতে পারছি। ’
বসুন্ধরা শুভসংঘ কলাপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান মিরাজ বলেন, ‘আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে প্রকৃত অসহায় নারীদের খুঁজে বের করে তালিকাভুক্ত করেছি আমরা। নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার ভাড়াটিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতে পেরে আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা খুব তৃপ্ত হয়েছি। ’
বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের সিনিয়র সহসম্পাদক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে, ইমদাদুল হক মিলন স্যারের নেতৃত্বে বসুন্ধরা শুভসংঘ সারা দেশে কাজ করছে। সমাজ ও দেশ গঠনের লক্ষ্যে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে আর্থিক সহায়তা, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করাসহ দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। গত ৩৮ বছরে শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে অসংখ্য কাজ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমও গ্রামীণ নারী উন্নয়নের একটি টেকসই পদক্ষেপ বসুন্ধরা গ্রুপের। ’
সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আমতলী পৌরসভা মিলনায়তনে জাকারিয়া জামানের সভাপতিত্বে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান।
আরও উপস্থিত ছিলেন আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান, আমতলী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম, সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক কাওসার, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও উপজেলা শুভসংঘের উপদেষ্টা মো. তুহিন মৃধা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শুভসংঘের উপদেষ্টা মো. তারিকুল ইসলাম টারজান, জেলা জামায়াতের শুরা ও কর্মপরিষদের সদস্য মো. আব্দুল মালেক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা সভাপতি মুফতি ওমর ফারুক জিহাদী, সাংবাদিক মো. জাকির হোসেন, এ কে এম খায়রুল বাশার বুলবুল প্রমুখ।
বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কলাপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি জসীম পারভেজ, আমতলী উপজেলা প্রতিনিধি হায়াতুজ্জামান মিরাজ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিরাজ ও রিয়াজুল ইসলাম ইমন।
রুজি-রোজগারের নিশ্চয়তা পেয়েছেন মিলি
‘ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর উপকূলীয় অঞ্চলের অসহায় মানুষের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দেশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যাওয়ায় দাতা সংস্থার মানব উন্নয়ন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে আসে। করোনা মহামারি এবং বিশ্বে যুদ্ধাবস্থায় গ্রামীণ পর্যায়ের মধ্যম আয়ের ও নিম্ন আয়ের মানুষ আরও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমান টানাপোড়েন গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থায় বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং নানা কারণে অসহায়-অসচ্ছল নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলের অসহায় নারীদের প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। আমিও একটি সেলাই মেশিন পেয়েছি। আমি শুধু সেলাই মেশিনই পাইনি, দুমুঠো রুজি-রোজগারের নিশ্চয়তা পেয়েছি। কেউ কারো নয়, এমন সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিক নিশ্চিয়তা পেয়েছি। ’
কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভাবের কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পাওয়া মিলি বেগম।
কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের পূর্ব মধুখালী গ্রামের বিধবা নারী মিলি। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল তাকে। মিলি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই কন্যা ও দুই ছেলের জন্য রুজি-রোজগার করতে ডানিডা ও কারিতাস এনজিওর অধীনে রাস্তার মাটি কাটার শ্রমিকের কাজও করেছি। কলাপাড়া শহরে এসে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে কোনো রকম জীবন চলে। মেয়ে দুটি বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেকে অনার্স শেষ করিয়েছি। ছোট ছেলে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এখনো শ্রমিকের কাজ করছি। সন্তানের লেখাপাড়ার খরচ আর সংসারের খরচ মেটাতে আমি যখন দিশাহারা, তখন বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে শনাক্ত করে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ দেয়। সেলাই মেশিন পেয়ে দরজির কাজ শুরু করেছি। আমার শিক্ষিত বড় ছেলের চাকরির জন্য এবং ছোট ছেলের লেখাপড়ার জন্য সেলাই মেশিন দিয়েই আয় করব। এখন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেয় না সন্তানরা। তাদের জন্য কিছু একটা করতে পারলে মরে গিয়েও শান্তি পাব। বসুন্ধরার দেওয়া সেলাই মেশিন পেয়ে আমার নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। আমি বিধবা, আমার জীবন-সংসার রক্ষায় যাঁরা এগিয়ে এসেছেন, আল্লাহ তাঁদের রক্ষা ও মঙ্গল করবেন, ইনশাআল্লাহ। ’
বসুন্ধরা গ্রুপ মানবতার কল্যাণে এগিয়ে এসেছে
পটুয়াখালী জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ৪৯২ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটারের উপজেলা কলাপাড়া। এখানে পায়রা বন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ত্রিমাত্রিক নৌঘাঁটি, সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন, রাডার স্টেশন, পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাসহ আরও মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১২টি ইউনিয়ন, দুটি পৌর শহরের দুই লাখের অধিক জনসংখ্যার এই উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করলেও এখানকার বহু পরিবারের মানুষ অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কোনো সম্পদ নেই, আয়ের উপায় নেই এমন পরিবারের নারীদের বাছাই করে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার অতিদরিদ্র ও অসহায় বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন প্রদান করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অনেক ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি উপজেলার অসংখ্য নারী-পুরুষের মধ্যে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ও অসচ্ছলদের সরকারি উদ্যোগে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এতেও সংকুলান হচ্ছে না।
বসুন্ধরা গ্রুপ একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তারা দেশ ও বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। মানবতার কল্যাণে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে অনেক কাজ করছে তারা। এটি শুনে আরো ভালো লাগছে।
দেশের অসচ্ছল ও অসহায় নারীদের পুনর্বাসনে সরকারি ও বেসরকারি এনজিও নয়, দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, অন্যান্যা শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ালে দেশের দরিদ্রতার চিত্র পাল্টে যেত। কলাপাড়ার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে প্রত্যাশা, তারা পায়রাবন্দরকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসহায় মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে। এতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার অসচ্ছল নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হবে। রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করলে মানুষ বসুন্ধরা মালিক ও কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি দোয়া করবে। এখানকার মানুষ অতি সহজ-সরল এবং ধার্মিক। তাদের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন। সর্বোপরি মানবতার কল্যাণে কাজ করা বসুন্ধরা গ্রুপের উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনা করছি।
নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ
সমুদ্র উপকূলীয় বরগুনার আমতলী উপজেলা। এখানকার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচেই বসবাস করছে। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে অসহায় পরিবারগুলো এখন খেয়ে-পরে থাকা ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু শিল্প-অর্থনীতিতে নয়, সামাজিক দায়িত্ব পালন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সেবার ক্ষেত্রে তাদের কাজ প্রশংসনীয় ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সমুদ্র উপকূলীয় সহায়-সম্বলহীন অসহায় মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের যে মহতী উদ্যোগ তারা নিয়েছে, তা অতুলনীয়। আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার অসহায় নারীরা প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার পাওয়া সেই মহতী উদ্যোগেরই অংশ। আমি যখন পাথরঘাটা উপজেলায় কর্মরত ছিলাম, তখনো বসুন্ধরা শুভসংঘের অনেক ভালো ভালো কাজ করতে দেখেছি। আমি আশা করছি, আমতলী উপজেলায় বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের মহতী উদ্যোগগুলো অব্যাহত রাখবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের সফলতা কামনা করছি।
জীবিকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি
পারুল রানী দাস
১৪ বছর আগে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম। তখন পারিবারিকভাবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম। এখন বয়স ৩০ ছাড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আসেনি কোলজুড়ে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের এতিমখানা এলাকায় বসবাস করি আমরা। অজ্ঞাত কারণে আমার কর্মক্ষম স্বামী ধীরে ধীরে উপার্জনের ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যান। উপার্জনের জন্য আমিই হয়ে উঠি একমাত্র মাধ্যম। অনেকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, চায়ের দোকানি হয়েও জীবিকা চলছিল না।
একটি বেসরকারি সংস্থায় এখন পিয়ন হিসেবে কর্মরত। সামান্য বেতনে চলছিল না আমাদের দুজনের সংসার। অর্ধাহারে দিন কাটানো এবং সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর মতো সামর্থ্য হারিয়ে যখন হতাশ হয়ে পড়ি, তখন বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে গত ১৭ মে আমাকেসহ ৩০ জনকে সেলাই মেশিন দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।
এই সেলাই মেশিন দিয়ে আমি এখন নারী ও শিশুদের বিভিন্ন পোশাক তৈরি করছি। এত দিন আমি সাংসারিক ও খুব প্রয়োজনে অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এখন আমার এলাকার মানুষ পোশাক তৈরির জন্য আমার দ্বারে আসবে। আমি নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলেছি। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছি, ঠাকুর যেন তাঁদের আরও অনেক মানুষকে সহযোগিতা করার তৌফিক দান করেন। তাদের সুস্থতা ও ব্যবসায়িক সফলতা দান করেন।
অতিদরিদ্রদের জন্য আশীর্বাদ বসুন্ধরা গ্রুপ
আমতলী উপজেলার অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে দিন যাপন করছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। সেই অতিদরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে তাদের সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ ও মেশিন বিতরণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ এই নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আমি অনুরোধ করব, বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যরাও যেন সমাজে অসহায় অতিদরিদ্র নারীদের পাশে এগিয়ে আসে। এতে কিছুটা হলেও সমাজের অসহায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান হবে, সমাজে তারা একটু ভালো থাকবে।
অবহেলিত নারীদের জন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ
দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অতি প্রশংসনীয়। সমুদ্র উপকূলীয় এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আমার বিশ্বাস, সমাজে পিছিয়ে পড়া অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে সমাজে অতিদরিদ্র মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। দিন দিন মানুষ সচেতন হচ্ছে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে।
যদি ইচ্ছা থাকে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে একটি পরিবারের ভরণ-পোষণ চালানো সম্ভব। আজকে যারা বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ ও মেশিন নিয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, যথাযথভাবে এই সেলাই মেশিনটি কাজে লাগাবেন। আপনারা ভাগ্যবতী! কারণ এই মেশিন দিয়ে টাকা আয় করে তাদের নিজ নিজ পরিবারকে বাঁচাতে পারবেন এবং স্বাবলম্বীও হতে পারবেন। আশা করছি, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু সেলাই প্রশিক্ষণ ও মেশিন বিতরণ করেই আমাদের এলাকায় তাদের কাজ শেষ করবে না, অতিদরিদ্র মানুষের জন্য তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত
বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অসহায় ও অতিদরিদ্র নারীদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ এবং মেশিন উপহার দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দরিদ্র অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বিনামূল্যে তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে আগে নারীদের দক্ষ করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই যখন কাজ শিখে ফেলেছেন, তখন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নারীকে একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে।
ব্যক্তি উদ্যোগে মানুষকে অনেক সহায়তা করতে দেখেছি, কিন্তু বসুন্ধরা শুভসংঘের এই কাজ আমার কাছে অনেকটা ভিন্ন রকমের মনে হয়েছে। অবশ্যই এটি অনেক প্রশংসার দাবিদার। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যরাও এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে একদিন দরিদ্র মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের সফলতা কামনা করি।
এনডি/এএটি