সাতক্ষীরা: সাফজয়ী জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেছেন, সাতক্ষীরায় মেয়েদের খেলার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট মাঠ দরকার। যাতে মেয়েরা আরও বেশি ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন কর্তৃক দেওয়া সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সাবিনা খাতুনের পরিবারের সদস্য ও তার কোচ প্রয়াত আকবার আলীর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা পেয়ে এই কৃতি ফুটবলার বলেন, দীর্ঘ একযুগ প্রতীক্ষার পর সাফের শিরোপা দেশে এসেছে। আমি যখন ফুটবল খেলা শুরু করি, তখন আমার স্বপ্ন ছিল সাউথ এশিয়ান কাপ বাংলাদেশকে উপহার দেব। আমি সেটা দিতে পেরেছি। এটা আমার স্বার্থকতা। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। এরপর এশিয়ার সেরা হবো- এটাই লক্ষ্য। সে জন্য দোয়া চাই।
এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে মেয়েদের জন্য খেলার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট মাঠের দাবি জানান।
সংবর্ধনা দেওয়ায় জন্য জেলা প্রশাসনসহ ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাবিনা বলেন, সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, মুগ্ধ। আমার বেড়ে ওঠা এই সাতক্ষীরার মাটিতেই। এ মাটিতেই আমার শৈশব মিশে আছে। আমার শিক্ষক আকবর স্যার আজ নেই। ওনার কথা অবশ্যই স্মরণ করতে হয়। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমার সাবিনা হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন আমার আকবর স্যার। সেই সঙ্গে আমাকে যারা সাপোর্ট দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
ফুটবল খেলাটা মেয়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় লোকের মেয়েরা ফুটবল খেলে না। গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা ফুটবল খেলে। কিন্তু খেলার সামগ্রী কেনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। খেলায় সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি। সাতক্ষীরায় ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে মেয়েদের জন্য মাঠের সংকট। জেলায় একটিমাত্র স্টেডিয়াম আছে। কিন্তু সেখানেও সব সময় খেলার সুযোগ থাকে না। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ ও পিটিআই মাঠ মেয়েদের খেলার জন্য উপযোগী নয়। এজন্য সাতক্ষীরায় মেয়েদের খেলার উপযোগী নির্দিষ্ট মাঠ প্রয়োজন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আকবর স্যার যখন আমাদের প্রাকটিস করাতেন তখন এক শ্রেণির মানুষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। সে সময় আমার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর। সেই প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি আমাদের গড়ে তুলেছেন।
অনুষ্ঠানে জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহ-সংগঠক ও প্রয়াত কোচ আকবার আলীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান, আমার স্বামী বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতেন, সাবিনা ও মাসুরারা আমার স্বামীর মুখ উজ্জল করেছে।
অনুষ্ঠানে সাবিনা খাতুনকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরায় নারী খেলোয়াড়দের এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া খুব দ্রুত একটি একাডেমি চালু করব। যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই খেলতে পারবে।
এসময় জেলা প্রশাসক সাবিনা খাতুনকে ফুলেল শুভেচ্ছা, সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ ১ লাখ টাকা উপহার দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাবিনা খাতুনকে তিন লাখ টাকা মূল্যমানের সৌজন্য উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সজীব খান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি মো. আশরাফুজ্জামান আশু, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মুক্তি, সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়েব হাসান, শামসুজ্জামান বাবু, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারহা দিবা খান সাথী, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এমএমজেড