পরে নেজাম কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার আরেফিননগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলোনীতে জায়গা কেনেন। সেখানে বসবাস করা নিম্ন আয়ের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে নেজাম উদ্দিন বনে যান পীর।
টাকার বিনিময়ে নিজের কিছু অনুসারী নিয়োগ দেন ‘ভণ্ড পীর’ নেজাম উদ্দিন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক ও তাবিজ দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিতেন টাকা। তার এসব অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের দিতেন মাসোহারা। এ কারনে ওই এলাকার বাসিন্দারা তার ভণ্ডামী বুঝতে পেরেও চুপচাপ সহ্য করে গেছেন। এভাবে গত ৩/৪ বছর ধরে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন ‘ভণ্ড পীর’ নেজাম উদ্দিন।
তার কাছে ঝাঁড়ফুঁক ও তাবিজ নেওয়ার জন্য আসা নারীদের টার্গেট করে হাতিয়ে নিতেন টাকা। চরিতার্থ করতেন যৌনলিপ্সা। গত ৯ আগস্ট ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশের পর বের হয়ে আসে ‘ভণ্ড পীর’ নেজাম উদ্দিনের কুকীর্তি।
কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ১৮ আগস্ট ওই কিশোরীর মা মামলা দায়ের করলে নেজাম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। এর পর থেকে কারাগারে রয়েছে নেজাম উদ্দিন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালত নেজাম উদ্দিনকে একদিনের রিমান্ড দেন।
২৫ আগস্ট নেজাম উদ্দিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোহাম্মদ নাসিম।
এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ অনেক তথ্য দিয়েছে নেজাম উদ্দিন। ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে নেজাম। নেজাম মূলত পীর সেজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো বলে জানিয়েছে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ভুয়া পীর নেজাম উদ্দিন আরেফিননগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলোনীতে খানকা খুলে মানুষকে ঝাঁড়ফুক করতেন। মানুষকে তাবিজ দিতেন। তার কাছে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতেন। গত কয়েকদিন আগে নেজাম উদ্দিনের খানকায় মহেশখালী থেকে একজন মহিলা আসেন। ওই মহিলা ভয় পাচ্ছেন এমনটা জানিয়ে সেদিন রাতে ওই মহিলার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য ওই কিশোরীকে তার খানকায় ডেকে নেয় নেজাম উদ্দিন। পরে রাতে অন্য একটি রুমে নিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে।
ওসি জানান, ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরীকে পরবর্তীতে আরও ছয়বার ধর্ষণ করে নেজাম উদ্দিন। কাউকে জানালে ওই কিশোরীর ক্ষতি হবে বলে ভয় লাগায় নেজাম। পরে ওই কিশোরী তার মাকে ঘটনা খুলে বললে তারা থানায় এসে অভিযোগ করেন।
সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে আরেফিননগর এলাকার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগে এই এলাকায় এসে একটি ‘সরকারি পাহাড়ের দখলসত্ব’ কেনেন নেজাম উদ্দিন। পাহাড়ের উপর বাড়িও তৈরি করেন। সেখানে স্থাপন করেন ‘নেজামিয়া খানকা’। সে সময় তিনটি গরু জবাই করে মেজবান দিয়েছিল নেজাম উদ্দিন। পরে নেজাম উদ্দিন তার খানকায় হাজিরা দেখে মানুষকে তাবিজ দেওয়া শুরু করেন। নেজাম উদ্দিনের খানকায় ৮-১০ জনের মতো লোক কাজ করে। তারা এসব কিছু ম্যানেজ করে।
বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, নেজাম উদ্দিন এক সময় ভবঘুরে ছিল। আরেফিননগর এলাকায় জায়গা কিনে সেখানে বসবাস করা নিম্ন আয়ের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে নেজাম উদ্দিন বনে যান পীর।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এসকে/টিসি