সোমবার (৩০ জুলাই) রাজ্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এই তালিকা প্রকাশ করে। ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢোকা অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে’ এই তালিকা করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, রাজ্যের মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে এনআরসিতে নাম উঠেছে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। বাদ পড়ে গেছেন বাকিরা। এর আগে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এনআরসির প্রথম তালিকায় জায়গা হয়েছিল মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দার। বাদ পড়ে কয়েক পুরুষ ধরে আসামে বসবাসকারী বহু বাঙালির নাম। নতুন তালিকায়ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকার লোকদের নাম বাদ গেছে বেশি।
ভারতের প্রথম কোনো রাজ্য হিসেবে নাগরিকদের এমন কোনো তালিকা করলো আসাম। রাজ্যের কর্মকর্তারা বিশেষ করে কট্টরপন্থিরা মনে করেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক বাসিন্দা আসামে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন এবং রাজ্যের জনতাত্ত্বিক চিত্র বদলে দিচ্ছেন।
এই তালিকায় যাদের জায়গা হয়নি, তারা আসামিজ পরিচিতি পাবেন না। এদেরকে অনেক আগে থেকেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বিবেচনা করে আসছে রাজ্যের কট্টরপন্থি অংশ।
এআরসি সমন্বয়ক সৈলেশ বলেন, যাদের এই তালিকায় জায়গা হয়নি, তারা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। আগের তালিকায় থাকলেও এই তালিকায় বাদ পড়েছেন এমন ব্যক্তিরাও অভিযোগ-আপত্তি উপস্থাপন করতে পারবেন। সেজন্য এনআরসি কমিটি তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করবে। অভিযোগ-আপত্তি গ্রহণ শুরু হবে ৩০ আগস্ট, শেষ হবে ২৮ সেপ্টেম্বর।
আবেদনের প্রক্রিয়া স্পষ্ট না হলেও সৈলেশ বলেন, ভারতের নাগরিকদের এতে ভীত হওয়ার কারণ নেই।
রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল এই তালিকা নিয়ে কোনো ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তবে তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রিপুন বোড়া বলেন, ৪০ লাখ লোকের বাদ পড়ে যাওয়াটা একেবারেই বিস্ময়কর। এই তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় অনেক অনিয়ম স্পষ্ট। আমরা এই তালিকার বিষয়ে বিধানসভায় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবো।
আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই বাসিন্দাদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের ভোটবঞ্চিত করার পেছনে বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মনে করেন রিপুণ বোড়া।
এই তালিকার সমালোচনা করেছে আঞ্চলিক প্রভাবশালী দল ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেওস। দলটির মুখপাত্র এসএস রায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ৪০ লাখ ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে এই তালিকা থেকে ছাঁটাই করেছে। এটা আসাম সংলগ্ন অন্য রাজ্যগুলোতেও জটিলতা তৈরি করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
তালিকা প্রকাশ ঘিরে গত সপ্তাহজুড়েই আসামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় সোমবার আসাম এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরে আধা-সামরিক বাহিনীর ২৩ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮/আপডেট ১৪০৬ ঘণ্টা
এমএম/এইচএ/