এমন দৃশ্যই বলে দিচ্ছে খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের ভেতরের দুর্দশার চিত্র। জরাজীর্ণ ভবনের দেয়ালগুলোর রুগ্নদশাও চোখে পড়ে বাইরে থেকেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে খুলনা মহানগরীর আপার যশোর রোডের বয়রা জিপিও এলাকার অর্ধশত বছরের পুরনো এ গ্রন্থাগারে গিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় এ দু’দিন বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠকরা। দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
তেমনি ফিরে যাওয়ার সময় সরকারি বিএল কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গণগ্রন্থাগার একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারি গ্রন্থাগারটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু সপ্তাহের দু’দিনই বন্ধ দেখে অবাক হলাম। বিশেষ করে শুক্রবার ছুটির দিন খোলা রাখলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো’।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ। এখন বিভিন্ন লাইব্রেরিতে নানা ধরনের বই পড়ি। আমার জানা ছিলো না যে, এটি বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ থাকে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা একটু ফ্রি হন, চাকরিজীবীরাও। বাকি দিনগুলোতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সেই বৃহস্পতিবার, এমনকি শুক্রবার যদি লাইব্রেরি বন্ধ থাকে, তাহলে তারা কবে আসবেন?’
তার মতে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার গণগ্রন্থাগারটি খোলা রেখে সপ্তাহের মাঝের যেকোনো দু’দিন বন্ধ রাখা যেতে পারে।
খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের উপ-পরিচালক হরেন্দ্রনাথ বসু বলেন, ‘এটি আমাদের মন্ত্রণালয়ের ঠিক করা সাপ্তাহিক ছুটি। সকল জেলা ও বিভাগে একই নিয়ম’।
এ দু’দিন খোলা থাকলে পাঠক বেশি হতো কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। যেহেতু সরকারি নিয়ম, তাই আমরা পালন করি’।
১৯৬৪ সালে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে বয়রার প্রায় আড়াই একর জমিতে একটি দোতলা ভবনে গণগ্রন্থাগারটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি বিএল কলেজ, বয়রা মহিলা কলেজ, মহসিন কলেজ, আযম খান কমার্স কলেজ, এমএম সিটি কলেজ, সুন্দরবন কলেজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পড়াশোনার জন্য এটি ব্যবহার করে আসছেন। গ্রন্থাগারটির আওতায় বিভাগের ১০টি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অর্ধশতক পার হলেও গ্রন্থাগারটিতে আধুনিকায়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি।
আরও খবর...
** ‘জনবল ও অর্থ সংকটে’ বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** গরুর অভ্যর্থনা মৌলভীবাজার গণগ্রন্থাগারে!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!
** জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই!
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
এমআরএম/এএসআর