ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

২৪ ঘণ্টার ‘কসাই’ ওরা 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
২৪ ঘণ্টার ‘কসাই’ ওরা  মৌসুমী কসাই তারা/ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: কেউ রিকশাচালক, কেউ দিনমজুর আবার কেউ ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন। কিন্তু এই পরিচয়টা আপাতত বাদ তাদের! নতুন পরিচয় ‘কসাই’। তবে এই পরিচয় তারা বহন করবেন সাকুল্যে ২৪ ঘণ্টা। এরপর আবার ফিরে যাবেন নিজ নিজ পেশায়। 

‘মৌসুমী’ এই কসাইদের এক বিশাল হাট বসেছে শহরের সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকা। কোরবানির ঈদ ঘিরে অন্তত পাঁচ শতাধিক অপেশাদার কসাই ভোর থেকে অবস্থান নিয়েছেন ওই এলাকায়।

সেখানে অবস্থান নিয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় একটি গরুর চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে মাংস বানানো পর্যন্ত চুক্তি নিচ্ছেন তারা।  

বনিবনা হলেই দা, চাপাতি, ছুরির ব্যাগ হাতে ছুটছেন। আবার তাদের হাতে সময়ও নেহায়েতই কম। একসঙ্গে একাধিক গরু বানানোর অর্ডার থাকায় দম ফেলারও সুযোগ নেই যেন! বুধবার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেলো এমন চিত্র।  

জানা যায়, প্রতি ঈদুল আজহায় ময়মনসিংহে শহরে যে পরিমাণ পশু কোরবানি হয় সেই তুলনায় পেশাদার কসাই মেলে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কসাই মিললেও তাদের দরদাম অনেক বেশি। ফলে ঈদের দিনটিতে তুঙ্গে থাকে মৌসুমী বা একদিনের কসাইয়ের চাহিদা।  

আর এই একদিনের কসাইয়ের বেশিরভাগই বাড়তি আয়ের আশায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ময়মনসিংহ শহরের সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকার এ হাটে আসেন। এখানেই দেখা হলো আশিকুল ইসলাম (৩৬) নামে এক মৌসুমী কসাইয়ের সঙ্গে। তার বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।  

‘ভাই লোক লোগে’ কোনো কথা বলার আগেই এক কোরবানিদাতাকে চটজলদি প্রশ্ন আশিকুলের। তার সঙ্গী তখন একই এলাকার তোতা মিয়াসহ (৪৫) চারজন। তোতা মিয়া জানান, প্রতি হাজারে ১শ হিসাব করে আমাদের টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকার গরু হলে ৫ হাজার মিল করে দিলেই হবে। ’ 

ওই কোরবানিদাতা তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ায় ব্যাগ হাতে ছুটলেন আশিক, তোতা মিয়ারা। যাওয়ার আগে আশিক জানান, ময়মনসিংহ শহরেই তিনি রিকশা চালান। ঈদের দিন বাড়িতে বসে না থেকে একটি টিম করে কোরবানির গরু কাটার কাজ করতে এসেছেন।  

এতে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা উপার্জনের পাশাপাশি মাংসও মিলবে। সন্ধ্যায় বাড়ি গেলে এই মাংস রান্না করেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবেন।  

মৌসুমী কসাইয়ের হাট!স্থানীয় সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের কলাপাড়া গ্রামের বাবলু মিয়া এমনিতে ক্ষেত মজুরের কাজ করলেও কদরের কথা ভেবে মৌসুমী কসাইয়ের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।  

চল্লিশ বছর বয়সী বাবলু মিয়া জানান, তিন থেকে চারটি গরু বানাতে পারলেই একদিনে জনপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব। হাতে অনেক কাজ আছে। একটির পর একটির কাজ শুরু করতে হবে।  

‘আমরা গরিব মানুষ। আমগর (আমাদের) তো আর কোরবানি দিওনের (দেওয়ার) সামত্ত (সামর্থ্য) নাই। নিজেও কামাইলাম (কামানো), সন্তানের লেইগা (জন্য) মাংসও নিলাম। এইডাই (এটি) আনন্দের’ বলছিলেন আরেক মৌসুমী কসাই জয়নাল মিয়া (৫০)।  

জয়নাল আরো জানান, তিনিসহ এই হাটে আরো কয়েকজন আছেন কমপক্ষে ১০ বছর যাবত ঈদের দিনে এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তাদের এ কাজে অভিজ্ঞতাও বেশি। প্রতিটি গরুর কাটার কাজ শেষ করতে তাদের ঘণ্টা দু’য়েকের বেশি সময় লাগে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮ 
এমএএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।