শুক্রবার (০১ নভেম্বর) কক্সবাজারের রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো পুণ্যার্থী। সন্ধ্যায় চীবর উৎসর্গ ও দেশ, জাতি ও জগতের সব প্রাণীর সুখ, সমৃদ্ধি কামনায় দু’দিন ব্যাপী এ উৎসবের শেষ হয়।
মেরংলোয়া বড়ুয়াপাড়া যুব সমাজের আয়োজনে এবারের কঠিন চীবন দানোৎসবের দাতা ছিলেন প্রয়াত কাশি মোহন বড়ুয়ার পরিবার।
শুধু এ বিহারে নয়, প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে রামুর ১৪টিসহ জেলার শতাধিক বৌদ্ধ বিহারে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব।
এ উৎসবকে ঘিরে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সীমা মহাবিহার প্রাঙ্গনে শুরু হয় কঠিন চীবর বুননের কাজ। সূদুর রাঙ্গামাটি থেকে আসা তাঁত শিল্পীরা বৃহস্পতিবার সূর্যাস্থের পর চীবর বুনন শুরু করে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পরদিন সূর্যোদয়ের আগে চীবর বুনন ও সেলাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও প্রয়াত পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর প্রতি পুণ্যদান করতে শুক্রবার ভোরে বুদ্ধপূজা, সকালে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, দুপুরে চীবরও কল্পতরু শোভাযাত্রা, বিকেলে ধর্মসভা এবং সন্ধ্যায় বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
বিকেলে ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান প্রিয়রত্ন মহাথের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা।
ধর্মসভায় প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন পটিয়া ও কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. সংঘপ্রিয় মহাথের। ধর্মদেশনা করেন ফারিকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বিজয় রক্ষিত মহাথের, উ ছেকাচারা মহাথের প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিহার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, রামু উপজেলা বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুন বড়ুয়া, সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, বুদ্ধের জন্ম, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভসহ মহামতি বুদ্ধের জীবনের প্রতিটি ঘটনা পূর্ণিমা কেন্দ্রিক। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিনটি হচ্ছে প্রবারনা পূর্ণিমা। এ তিন মাস ভিক্ষুরা নিরলসভাবে শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করেন। এরমধ্যে বিশেষ কয়েকটি কারণ ছাড়া এক রাতের জন্যও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিহারের বাইরে থাকতে পারেন না। যদি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করেন তবে ওই ভিক্ষু কঠিন চীবর লাভ করতে পারেন না। মূলত বিহারে অধিষ্ঠানরত বৌদ্ধভিক্ষুকে চীবর দান করার জন্য এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান প্রিয়রত্ন মহাথের জানান, বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী, রাতারাতি তুলা থেকে সুতা বুনে, সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি ও সেলাই করে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দান করা হয় বলে এ উৎসবকে কঠিন চীবর দান উৎসব বলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এসবি/এইচএডি/