রাজ্যের সফল চা চাষি ও ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য গোপাল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর চা পাতার পাশাপাশি গাছের চারা উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গোপাল বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে চা বাগান শুরু হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর আগে রাজন্য আমলে। তবে সাম্প্রতিককালে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গুণগতমানও বাড়ছে। তাই রাজ্যের বাইরেও ত্রিপুরার চায়ের চাহিদা বাড়ছে। তবে চা চাষ করেই বসে নেই চাষিরা। এর পাশাপাশি চা গাছের চারা উৎপাদনেও মনোযোগী হয়েছেন একাংশের চা চাষি। এখন রাজ্যের মানুষ অন্য বাগিচা চাষের পাশাপাশি চা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের নতুন বাগান সৃষ্টি হচ্ছে।
চা চাষের পাশাপাশি গোপাল নিজেও গত তিন বছর ধরে চা গাছের চারা উৎপাদন করছেন। এ বছর এক হেক্টর জমিতে চায়ের নার্সারি করেছেন। রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে দুর্গাবাড়ী এলাকায় তার বাড়ির পাশে এ নার্সারি করেছেন। এ জমিতে তিন লাখ ১৫ হাজার পলি প্যাকেটে বীজ লাগিয়েছেন। এরমধ্যে সবক’টি বীজ থেকে অঙ্কুর বের না হলেও বা চারা নষ্ট হলেও নূন্যতম দুই লাখ ৭৫ হাজার চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
২০১৯ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে চারা লাগানো শুরু করেছেন গোপাল। এ কাজ শেষ হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে। ধাপে ধাপে লাগানোর কারণে নার্সারিতে বিভিন্ন আকারের চারা রয়েছে। কিছু চারা দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়েছে। আবার কিছু কিছু চারা সবে মাত্র বীজ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এ চারাগুলো চলতি বছরের জুন মাসে বিক্রির উপযোগী অর্থাৎ নার্সারি থেকে তুলে বাগানে লাগানোর উপযোগী হবে।
‘রাজ্যে উৎপাদিত চা চারাগুলো চা উন্নয়ন নিগম কিনে নেয় এবং বিভিন্ন সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মাধ্যমে চাষে আগ্রহী চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া অনেকে নিজেদের উদ্যোগে এখন চা বাগান করছেন। তারা কিনে নেন। ’
ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি তার কাছে ১০ হাজার চারা অর্ডার দিয়েছেন বলে জানান গোপাল। এক একটি চারা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় পাঁচ রুপি। এগুলো বিক্রি হয় আট থেকে ১০ রুপি করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যের উত্তর জেলায় চা বাগান তৈরির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। কারণ সেখানে প্রচুর পরিমাণে খালি টিলা জমি পড়ে আছে। যাদের নিজস্ব জমি আছে এবং চা বাগান তৈরি করতে আগ্রহী তাদের আড়াই বিঘা জমিতে সরকারি খরচে বাগান তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
চা গাছের বীজ কোথায় থেকে আনেন? এর উত্তরে গোপাল বলেন, মূলত আসামের জোরহাট ও টকলাইসহ আশপাশের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে বীজ উৎপাদন করা হয়। সেখানের বীজের মান ভালো এবং ভারত সরকারের চা উন্নয়ন পর্ষদের সনদপ্রাপ্ত বীজ পাওয়া যায়। এছাড়া ত্রিপুরার কয়েকটি বাগানেও চা বীজ উৎপাদন করা হয়। তবে তিনি আসাম রাজ্য থেকে বীজ এনে চা চারা উৎপাদন করছেন। তিনি ছাড়াও রাজ্যের আরও কয়েকজন চাষি চা চারা উৎপাদন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
এসসিএন/আরবি