ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আগরতলা

করোনায় ক্ষতির আশঙ্কায় আনারস চাষিরা, পাশে থাকবে সরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২০
করোনায় ক্ষতির আশঙ্কায় আনারস চাষিরা, পাশে থাকবে সরকার

আগরতলা (ত্রিপুরা): করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর ত্রিপুরা রাজ্যের আনারস চাষিরা সংকটময় অবস্থায় রয়েছেন। আনারস কবে বিক্রি করতে পারবেন এ আশঙ্কায় দিন কাটছে বাগান মালিকদের।

ত্রিপুরা রাজ্য আনারস চাষের জন্য ভারতবর্ষের মধ্যে বিখ্যাত। সুস্বাদু কুইন প্রজাতির আনারস ত্রিপুরাতে খুব ভালোমানের হয়ে থাকে।

তাই কুইন আনারস ইতোমধ্যে জিওগ্রাফিক আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) সনদ পেয়েছে। এছাড়া কিউই প্রজাতির আনারস ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।

ত্রিপুরার কুইন ও কিউই প্রজাতির আনারস ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও রফতানি হয়ে থাকে।

গবেষকদের মতে, ত্রিপুরা রাজ্যের মাটি আনারস চাষের জন্য বিখ্যাত। ত্রিপুরার আনারসের চারা অন্য জায়গায় নিয়ে চাষ করলেও এখানকার মতো সুস্বাদু হয় না। তাই এ রাজ্যের আনারসের চাহিদা বিপুল। ত্রিপুরায় মোট আটটি জেলা রয়েছে। সবক’টি জেলাতেই আনারস উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর আনারস চাষিরা গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। এর মূল কারণ হলো- করোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বজুড়ে যে লকডাউন চলছে এর ফলে আনারস রফতানি করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

..রাজ্যের পশ্চিম জেলার অন্তর্গত নন্দন নগর এলাকার অন্যতম সুপরিচিত আনারস চাষি হলেন ভীরু সাহা। বংশ পরম্পরায় তিনি আনারস চাষের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিঘা টিলা জমিতে আনারস বাগান রয়েছে তার।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, এ বছর তিনিসহ রাজ্যের আনারস চাষিরা দু’দিক থেকে ক্ষতির মুখে। প্রথমত আনারস গাছে যখন কুঁড়ি আসে সেসময় এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। ফলে আনারসের বাগানে ফলন কম হয়েছে। এছাড়া আনারসের বৃদ্ধি ও আকার সঠিক হয়নি বৃষ্টির পানি না পাওয়ায়। এরপরও বাগানে যে পরিমাণ আনারস এসেছে তাও কতদূর বিক্রি করতে পারবেন এ আশঙ্কা রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে লকডাউন। লকডাউনের জেরে সাধারণ মানুষের হাতে এখন অর্থকরী নেই বললেই চলে। এছাড়া লকডাউনের কারণে বিদেশের বাজারে আনারস রফতানি করা তো দূরের কথা ভারতের অন্য রাজ্যে আনারস পাঠানো যাবে কিনা এখন এটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও জানান, ত্রিপুরা রাজ্যের আনারসের অন্যতম বড় বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে করোনার যে প্রাদুরভাব দেখা দিয়েছে এর জেরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী ত্রিপুরা থেকে আনারস নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেননি। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর আনারস মার খেয়েছে।

ভীরু সাহা জানান, প্রচণ্ড রোদের তাপে অনেক আনারস ফুল থেকে বড় হওয়ার আগেই জলসে গেছে। এছাড়া যে আনারসগুলো সামান্য বড় হয়েছে এগুলোর আকার ত্রিপুরা রাজ্যের স্বাভাবিক যে আকারের আনারস হয়ে থাকে তার তুলনায় ছোট। আনারসের রঙও সুন্দর হয়নি।

তিনি জানান, অন্য বছরগুলোতে যেখানে বাগানে একসঙ্গে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন শ্রমিক আনারস সংগ্রহের কাজ করতেন। এ বছর সেখানে মাত্র একজন শ্রমিক কাজ করছেন। আগের বছরগুলোতে এক একজন শ্রমিক ১৫-২০ মিনিটে ২০০ থেকে ২৫০ টি আনারস তুলে আনতে পারতেন গাছ থেকে। আর এ বছর ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের ২০০টি আনারস সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তার বাগানে আনারস সংগ্রহ করার কাজে যুক্ত ভরত দেববর্মা বাংলানিউজকে জানান, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি আনারস বাগানে কাজ করছেন। এ বছর আনারসের সবচেয়ে খারাপ ফলন হয়েছে বলে তার অভিমত। আনারসের আকার যেমন ছোট তেমনি সেই আকর্ষণীয় রঙ নেই। এছাড়া পর্যাপ্ত আনারস না থাকায় বাগানের মধ্যে ঘুরে ঘুরে তাকে আনারস সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা অনেক কষ্টকর।

..পাশের বাগানে কাজ করছিলেন পৌড় মনিন্দ্র মারাক। তিনি জানান, এ বছর আনারস বাগানে খুব কম পরিমাণে ধরেছে। যেগুলো ধরেছে এগুলো আকারে ছোট। সাধারণ মানুষের এ ধরনের আনারস পছন্দ হবে না।  

সামনে বর্ষার মৌসুম এলে কী আনারস ভালো হবে? উত্তরে তিনি বলেন, এখন বৃষ্টি হলেও আনারসের ফলনে কাজে আসবে না। ফুল ফোঁটার সময় বৃষ্টি হলেই আনারসের আকার বড় হতো।

তবে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায় বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের মধ্যেও ত্রিপুরা সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আনারস যাতে ভারতের অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া যায় তার জন্য ট্রেনে বাতানুকূল পণ্যবাহী কামরা যুক্ত করার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছি। রেল মন্ত্রক দু’টি ট্রেনে বাতানুকূল পণ্যবাহী কামরা লাগানোর ক্ষেত্রে সম্মতি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এসসিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।