ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

শীতের সৈকত, অন্যরূপে কক্সবাজার!

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪
শীতের সৈকত, অন্যরূপে কক্সবাজার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে: বালুকাবেলায় নোনাজলের ফেনিল ছাপ স্পষ্ট। সমুদ্রের গর্জন ধেয়ে আসে কিনারে।

আছড়ে পড়ে ঢেউ। পড়ন্ত বেলায় সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। আকাশে পাখি আকৃতির লেজহীন ঘুড়ি চোখের আড়াল হতে থাকে। দিনভর তেজোদ্দীপ্ত সূর্যটা ম্রিয়মান সমুদ্রের জলে। প্রথাগত এসব নিয়মের বাঁধ ভেঙ্গে ছুটে আসে মানুষের দল। সকাল, দুপুর, বিকেল নেই; হাজারো মানুষের পদচারণায় জেগে থাকে সৈকত।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শীতের গল্পটা যেন একটু ভিন্ন হয়েই ধরা দেয় হাজারো পর্যটকের কাছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ সমুদ্র সৈকত দেখতে শীতকালের ভিড়টাই সবার কাছে বড় হয়ে ধরা পড়ে। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় এ সময়ের। পরিবহন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে এখানকার স্কুটার, অটোরিকশা এমনকি রিকশাচালক পর্যন্ত সবার অপেক্ষা একটি জমজমাট মৌসুমের। একটু বাড়তি রোজগারের আশায় কারও বা বাড়তি বিনিয়োগ।

সূত্র বলছে, বিগত কয়েক বছর ধরে ডিসেম্বরের শেষ সময়টা, বিশেষ করে থার্টিফার্স্ট নাইটের আয়োজনটাই কক্সবাজারকে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। কাঁপানো শীত নিয়ে আসে ডিসেম্বর। আর এরই ধারাবাহিকতায় ফিরে আসে বছর শেষের আয়োজন।

এবার সমুদ্র সৈকতে চারটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ কনসার্টের আয়োজন চলছে। সৈকতের আশপাশের হোটেলগুলোতে মধ্য ডিসেম্বর থেকেই বুকিং শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার শেষ ডিসেম্বরে অন্তত আড়াই লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

‘ডিসেম্বর শেষ হোক বা না হোক, শীত তো এসেছে! বছরের সব মৌসুমে এখানে বেড়ানোর সুযোগ থাকলেও শীতটাই যেন প্রকৃত সময়। সে কারণেই বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ মৌসুমেই ভিড়টা একটু বেশি। ’

কথাগুলো ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শহীদুল আলমের। হাজার কাজের মাঝে পরিবার পরিজন নিয়ে শীতেই বেড়ানোর সময়টা বের করেছেন। কক্সবাজারে বেড়াতে শীতকালকেই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তিনি।

আরেকজন শামীমা রহমান। পরিবারের সদস্যসহ সাতজনের দল। দু’দিন ধরে কক্সবাজারে। জানালেন, শীতে সমুদ্র পাড়ে বেড়ানোর অন্যরকম আনন্দ। তাই কর্মব্যস্ততার মাঝেও ছেলেমেয়েদের স্কুল ছুটির সুযোগে শীতে বেড়াতে আসা।

এমন কথা আরও অনেকের মুখে। তবে কারও মুখ থেকে না শুনলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আনাচে-কানাচে ঘুরে খুব সহজেই পর্যটকদের অনুভূতি উপলব্ধি করা যায়।

ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীত সকালের কক্সবাজার থাকে অন্যরূপে। ভোররাতে পাহাড়ে পাখিদের ডাকাডাকি আর মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি পর্যটকদের ঘুম ভাঙায়। পুব আকাশে নতুন সূর্য লাল আভা ছড়ানোর অনেক আগেই পিচঢালা রাস্তায় রিক্সার টুং টাং শব্দ।

কাঁপানো শীতেও পর্যটকের তাড়া সুর্যোদয় দেখার। ঝাউ বাগানের পাতা ঢেকে থাকে কুয়াশায়। সারারাতের জমাট কুয়াশা ঘিরে রাখে সৈকত। তবে সমুদ্রের তীরে আঁছড়ে পড়া ঢেউয়ের আওয়াজটা যেন একইভাবে কানে বাজে। যেন নিজের সৌন্দর্যটা দেখাতেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সকালে সমুদ্র সৈকত ভিন্ন মাত্রা পেলেও এ সময়ে সূর্যাস্ত দেখাটা যেন পর্যটকদের ভাগ্যের ব্যাপার। অল্প সময়ের সফরে পর্যটকদের থাকে অনেক তাড়া। সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্য ওঠার দৃশ্যটা এক নজর দেখার ইচ্ছা থাকলেও সে ইচ্ছাটা অনেক সময়ই অপূর্ণ থেকে যায়। আর সে কারণে অধিকাংশ পর্যটকের প্রতিটি ভোর কাটে সৈকতের বেলাভূমিতে। আলাপে অনেকের কণ্ঠেই আক্ষেপের সুর। সূর্যোদয়টা কি তাহলে দেখা হবে না!

পৌষের দুপুরের তেজোদ্দীপ্ত সূর্যটা পশ্চিম আকাশে নেমে গিয়ে ম্রিয়মান এক রক্তবর্ণ বৃত্ত। যেন সমুদ্রের নোনাজলেই তার অন্তিম অবসান। অস্তমিত সূর্যটা ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে ফেলে একটি দিন। বছরের অন্য সময়ের মতো ভরা শীতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে বহু মানুষ।

এখানকার অন্যসব আকর্ষণের সঙ্গে সূর্যের অন্তিম অবসান দেখার আগ্রহ অনেকেরই। শেষ বেলায় তাই সৈকতে জমে হাজারো মানুষের ভিড়। খালি পায়ে বালুকাবেলায় নোনাজল ছুঁয়ে কিংবা পানিতে নেমে সৈকত ভ্রমণের আনন্দটা আরও নিবিড় করতে চায়। ভ্রমণ আনন্দের কাছে হার মানে শীতের তীব্রতা।

শীতের বিকেলটা গোধূলিতে মিলায়। আবার কুয়াশাচ্ছন্ন হতে থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকত আরেকটি রাতের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। শুধু জেগে থাকে সমুদ্র। তার আহ্বানের ধ্বনি যেন কখনই থামে না। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু পর্যটক শীত সন্ধ্যার পরেও ছুঁটে চলেন সৈকতের বালুকাবেলায়। জোয়ারে সমুদ্রের নোনাজলে পা ভিজিয়ে অনেকে সৈকতে হেঁটে চলেন অধিক রাত। কাঁপানো শীতের রাতে আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করার চেয়েও সৈকতের শীতল বাতাসে উজ্জীবিত হন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

শীত-রাতের গভীরতা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে সৈকত মার্কেটগুলোর বর্ণিল আলোর ছটা। লাল, নীল, সবুজ, সাদা, হলুদসহ রকমারি আলোর মিশেলে যোগ করে এক ভিন্নমাত্রা। হরেক পণ্যের দোকানে পর্যটকদের আনাগোনা চলে মধ্যরাত অবধি।

ফুচকা-চটপটির দোকানেও থাকে ভিড়। কেউবা দাঁড়িয়ে চুমুক দেন গরম চায়ের পেয়ালায়। এভাবে পার হয় অনেকটা রাত। আর এভাবেই আরেকটি নতুন ভোরের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে শীতের কক্সবাজার।        

[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোন খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: [email protected] ]

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।