ভোলা: ঈদ মানে আনন্দ হলেও ঈদুল আজহা সত্যিকারের কোনো আনন্দ বয়ে আনেনি ভোলার মেঘনা নদীপাড়ের মানুষদের জন্য।
নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো তীরবর্তী জনপদের অনেকের কাছেই তাই এবারের ঈদ নতুন কোনো অর্থ বহন করে আনেনি।
এদিকে, ঈদুল আজহায় কোরবানির দেওয়া তো দূরের কথা পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক কিংবা ভালো খাবারের ব্যবস্থাই করতে পারেননি অনেকে।
খোলা আকাশের নিচে দিন কাটানো ভাঙনকবলিত ৭ শতাধিক পরিবারের এসব মানুষদের কাছে তাই ঈদের অন্যে কোনো মানে নেই।
এদিকে, এসব মানুষদের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল। তবু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এসব বানভাসী মানুষের। দিন বদলের চেষ্টার কোনো বিরাম নেই তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগেও এসব মানুষদের নিজের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি এমনকি কারো কারো হালের গরু, পুকুরের মাছ সবই ছিল। কিন্তু সর্বনাশা মেঘনার ছোবল কেড়ে নিয়েছে সদরের ইলিশা ও রাজাপুরের হাজারো মানুষের স্বপ্ন-সাধ সবকিছু।
নদীভাঙনের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই আসা ঈদ তাই ঈদ হাসি আর আনন্দ-উৎসব বয়ে আনেনি এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে।
ইলিশার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে জোয়ারে পানি আর অন্যদিকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৭ শতাধিক পরিবারের ঈদের ছোয়া লাগেনি। খাবারের সংস্থান ও নতুন করে ঘর তৈরির চিন্তাতেই বিভোর তারা।
তবে ঈদের আনন্দ না থাকলেও ঘুরে দাঁড়াতে চান এসব মানুষেরা। বাঁধের উপর, রাস্তায় ও খোলা আকাশের নিচে বসবাসরত সর্বস্ব হারানোর মানুষদের চোখে-মুখে শুধু এই প্রত্যয়।
ভাঙকবলিত জরিনা (৪৫) নামে এক গৃহবধূ জানান, ২ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তার আগের বছর মারা যান একমাত্র ছেলে। পরিবারে উপার্জনক্ষম স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে কষ্টে হলেও দিন কাটছিল তার। কিন্তু সম্প্রতি মেঘনার ভাঙনে চলে গেছে তার শেষ অবলম্বন ঘরটাও। মেয়েকে নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাই ঈদে নতুন কোনো অনুভূতি নেই তাদের। পরিবারেও নেই উৎসবের ছোয়া।
বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধা আঞ্জু বেগম (৭০) জানান, ৪ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। ১২ গন্ডা জমি ছিল, সব গেছে নদীতে। নতুন করে ঘর তৈরির চিন্তায় অস্থির তিনি। তাই ঈদ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই তাদের।
সাহিনুর ও রাবেয়া বলেন, একবেলা ভাত জুটছেনা, ঈদের দিন কিভাবে কাটাব। আমাদের ঈদ আনন্দ নেই।
আবু কালাম আরেকজনের আক্ষেপ, নদীতে ঘর নিয়ে গেছে। নতুন করে ঘর তুলতে পারিনি। ঈদে ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড় কিনে দিতে পারিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
ঈদ উপলক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
এসআর