ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

বিশ্ব ডাক দিবস

পাথরঘাটার ১৬টি শাখা ডাকঘরের কার্যালয় নেই

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৫
পাথরঘাটার ১৬টি শাখা ডাকঘরের কার্যালয় নেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রান্তিক জনপদ ঘুরে এসে: ‘কত চিঠি লিখে লোকে কত সুখে প্রেমে আবেগে স্মৃতিতে কত দুঃখে ও শোকে। এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ...’ কবি সুকান্তের এ কথার মতোই লাল রঙের ঢোল আকৃতির চিঠির বাক্সের কথাও বুঝি এ রকমই।



একটা সময় পাড়া-মহল্লার কোনো দেয়ালে ও লাইট পোস্টের সঙ্গে ঝুলানো থাকতো চিঠির বাক্স। প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গ্রামগঞ্জে চোখে পড়তো পোস্ট অফিস, ঠকঠক শব্দ শোনা যেত, হাতে হাতে দেখা যেত হলুদ খাম; আজ তা বিলুপ্তির পথে।

আজ ৯ অক্টোবর (শুক্রবার) বিশ্ব ডাক দিবস। প্রতি বছরই এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে খুব ধুমধাম করে। শুধুমাত্র বছরের মাথায় ব্যানার, ফেস্টুনসহ র‌্যালি ও আলোচনা দিয়েই শেষ হয় এ দিবসটি। পরে আর এ দিবসের অন্তরালে যে অনেক কিছুই থেকে যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এ দিবসটি সামনে রেখে পাথরঘাটার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে ডাকঘরের চিত্র। মনে হয় এ ডাকবিভাগের কোনো অভিভাবক নেই। নেই দেখভাল করার মতো কোনো লোক।

সরেজমিনে পাথরঘাটা কালমেঘা ইউনিয়ন ঘুরে চোখে পড়লো একটি ডাক বিভাগের অফিস। কালমেঘা ঐতিহ্যবাহী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংলগ্ন একটি কক্ষে “ডাকঘর অফিস”। নামে মাত্র পোস্ট অফিস। সাইনবোর্ড নেই, দরজা-জানালা ভাঙা, তাকিয়ে শুধু একটি ভাঙা টেবিল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। কিছু কাগজপত্র তাও অনেক আগেই ময়লা আবর্জনার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। পাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, এটি একটি পোস্ট অফিস। এই ডাকঘরটি দেখে মনে হয়নি এটি একটি ডাকঘর। মনে হচ্ছে একটি গোয়াল ঘরের মতো।

পাথরঘাটায় উপজেলা প্রধান কার্যালয় ভবন ছাড়া ১৬টি শাখা ডাকঘরের কোনো কার্যালয় নেই। এসব ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টারের বাড়ি বা স্থানীয় বাজারের কোনো দোকানে। উপজেলায় চাহিদা তুলনায় ডাক বিভাগের জনবল কম। রানারের অভাবে সঠিক সময় গন্তব্যে চিঠিপত্র পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগী মানুষের। এরকমের অধিকাংশ ডাকঘরের এবস্থা নাজুক। বেশিরভাগ শাখা ডাকঘর চলছে পোস্ট মাস্টারের বাড়ির বারান্দায় অথবা কাচারি ঘরে।

কালমেঘা মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রফিক বলেন, এ ডাকঘর কার্যালয় বহু দিন ধরে গরু ছাগল অবস্থান করে। যেমনি এ ডাকঘরের অভিভাবক নেই, তেমনি অভিভাবকহীন গরুছাগল থাকে।

আজিজাবাদ পোস্ট মাস্টার বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তাদের নামে মাত্র ১২শ টাকা বেতন দেওয়া হয়, তাতে তাদের কিছুই হয় না। অন্যান্যদের মতো তাদেরও বেতন ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে কাজের প্রতি মনোযোগ থাকবে।

হাড়িটানা গ্রামের বাসিন্দা জসিম ফকির বাংলানিউজকে বলেন, হাড়িটানা, চরলাঠিমারা, বাদুরতলা ও গহরপুর এ ৪টি গ্রামের পোস্ট অফিস হাড়িটানা হিসেবে থাকলেও বহু বছর ধরে হাড়িটানায় কোনো কার্যালয় বা কার্যক্রম নেই। বাদুরতলা বাজারে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চলছে তাও কোনো দপ্তর নেই।

হাড়িটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছগির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসে পরীক্ষার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে। অনেক চাকরি প্রার্থীরা এ ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পাথরঘাটা উপজেলা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বাবু সুখরঞ্জন দাস বাংলানিউজকে বলেন, কার্যালয় বা ভবন না থাকলেও ডাকঘরের কার্যক্রম শাখা পোস্ট মাস্টারদের চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এই সাব ডাকঘরের আওতাধীন ১৬টি শাখা ডাকঘরের মধ্যে সবকটির ভবন বা কার্যালয় নেই।

এ ক্ষেত্রে দাপ্তরিক কার্যক্রম বা মানুষের সেবাপেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রাহকদের সেবা পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। সাধ্য অনুযায়ী কর্মকর্তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

সিনিয়র আইনজীবী নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডাকঘর বিভাগ খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো নজর রাখছে না। চিঠিপত্র সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছানো না হওয়ায় যেমন তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তেমনি মানবাধিকারও লঙ্ঘিতও হচ্ছে। ডাক বিভাগের দিকে সরকারের এখনই নজর দেয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad