ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

পানিই মরণ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
পানিই মরণ! ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফাের

সোনাগাজী, ফেনী থেকে: পানির অপর নাম জীবন। পানির কারণেই পৃথিবীতে প্রাণ আছে।

তবে সে পানিই যখন সুপেয় না হয়, তখন তা হয়ে উঠে নানা অসুখ, এমনকি মরণেরও কারণ।

এমনটাই হয়েছে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় এলাকায়। নিত্য ব্যবহার্য কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। পেটের পীড়া, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ।

তবে শিশুদের মধ্যেই এর প্রকোপটা বেশি দেখা দিচ্ছে। উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।

জোয়ারে পানি ওঠার কারণে এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়ি সংলগ্ন পুকুর, খাল, বিলে নদীর লোনা পানির একচ্ছত্র অধিকার।
 
জানা যায়, আয়তনে বেশ বড় এ গ্রামটিতে মাত্র দু’টি টিউবওয়েল রয়েছে। সেখানকার পানি কেবলই খাবারের কাজে ব্যবহৃত হয়। গোসলসহ বাকি সব পানির কাজ করতে হয় পুকুর বা খালের লোনা পানি দিয়েই। ঘোলা ও নোংরা এসব পানি ব্যবহারের কারণে গ্রামের অধিকাংশ শিশুর শরীরে চর্মরোগ দেখা যায়। একাধিক প্রাপ্ত বয়স্কও জানান এ অসুখের কথা।
 
গ্রামের এক কোনে নদী ভাঙন কবলিত ৩শ’ পরিবারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া জায়গায় আশ্রয়ন তৈরি করা হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় হাজার খানেক মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র দু’টি টিউবওয়েল। তার মধ্যে একটি আবার বছরের প্রায় সময় বিকল থাকে। ইচ্ছে থাকলেও তাই গোসল, রান্নাসহ প্রতিদিনকার কাজগুলো মিষ্টি পানি দিয়ে করা সম্ভব হয়না। ফলে এলাকার নারী-পুরুষ শিশুদের প্রতিদিনই কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, একটু মিষ্টি পানির পরশ পেতে চাতক পাখির মত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেন উপকূলের জনগণ।
 
এ প্রসঙ্গে নদী ভাঙনে নিঃস্ব বিবি আমেনা আক্তার (৩০) বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় তিন মাস আগে একবার মিষ্টি পানিতে গোসল করেছি। কিন্তু এ পুকুরে ময়লা আর লোনা পানির কারণে আমার চোখে অসুখ হয়, মাথার চুল ওঠা শুরু করেছে।

আমেনা নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে কথা বলছিলেন, এক পর্যায়ে তার শিশু সন্তান বিবি আয়েশাকে এ পানিতে গোসল করাতে হয়-যে কারণে শিশুটির পুরো শরীরে এলার্জিতে ফোস্কা পড়ে গেছে।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু যেন সে মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এ ইউনিয়নটির অনেক বাড়িতেই মেঝে পর্যন্ত পানি উঠে আসে। এসময় চুলা পর্যন্ত জ্বালাতে পারেনি কেউ কেউ। ফলে অসুখ বাসা বাধতে শুরু করে।

এ বিষয়ে স্থানীয় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার অধিকাংশ মানুষই পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত পেটের অসুখের ওষুধ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, জোয়ার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এখনকার  টিউবওয়েলগুলোতে লবণাক্ত দূষিত পানি প্রবেশ করে এবং সে দূষিত পানি পান করে এলাকার লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অনেক সময় বাচ্চারা গোসল করতে গিয়ে লোনা পানি খেয়ে ফেলে।
 
কথার প্রমাণও মেলে তার কাছে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে।

পেটে ব্যথা নিয়ে এ মেডিকেল অফিসারের কাছে হাজির হন জয়িতা রানী দাস। অসুখের বিররণ শুনে ডা. নুরুল তাকে গ্যাসট্রিকের ওষুধ দেন। আলেয়া আসেন তার শিশুর ডায়রিয়া নিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা আছিয়া খাতুন নিজের শরীরে চুলকানি দেখিয়ে বলেন, লোনা পানিতে কাপড় ধুঁই বলে, সেটা পরিষ্কারও হয়না। রোজা-রমজানের দিনে নিজেকে একটু পরিষ্কার রাখতে কে না চায়। কিন্তু পানির অভাবে সে সুযোগই মিলছে না।

**জোয়ারে বন্ধ, ভাটায় খোলা

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
জেপি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।