ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

২শ একর জায়গা রেখে পরিত্যক্ত ভবনে চিকিৎসা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
২শ একর জায়গা রেখে পরিত্যক্ত ভবনে চিকিৎসা ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সোনাগাজী, ফেনী থেকে: দুইশ’পাঁচ একর জমি আছে হাসপাতালের নামে, কিন্তু সেখানে হাসপাতালের কোনো চিহ্ন নেই। এর পরিবর্তে ভাঙা চোরা ভবনে চলছে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা।

যার সম্বল একটি চেয়ার টেবিল ও কার্টনে রাখা কিছু ওষুধ। আর রয়েছেন একজন মেডিকেল অফিসার। প্রাথমিক কিছু রোগের চিকিৎসা ছাড়া যার পক্ষে আর কিছুই করা সম্ভব নয়। ফলে বড় কোনো অসুখ হলেই শহরে ছুটতে হয় ফেনীর উপকূলীয় এলাকা সোনাগাজীর চর চান্দিয়া ইউনিয়নের মানুষগুলোকে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর জন্য চিকিৎসা সেবা বলতে কিছুই নেই।

এলাকাটি ঘুরে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা হাজি মনির আহমদ, হাজী আলী আহমদ ও প্রফুল্ল দাস এখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২০৫ একর জমি দান করেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই জমি পতিত অবস্থায় থাকলেও হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকারই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরাট আয়তনের এ জমিতে সবার সুযোগ সুবিধাসহ কমপক্ষে ৩০ শয্যা বিশিষ্টি হাসপাতাল নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু শুধু কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও  ইচ্ছার অভাবে তা হচ্ছে না। হাসপাতালের এ পতিত স্থানটির চারপাশে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর পাশেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও পরিত্যক্ত ফেনীর পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি দেহে ফাটল নিয়ে দাঁড়িয়ে। সেই জীর্ণ ভবনেটিই সোনাগাজী পূর্ব চর চান্দিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এ কেন্দ্রটিতে পাঁচটি পদ থাকলেও শুধু একজন মেডিকেল অফিসার দিয়েই চলছে। ভবনটির ভেতরেই পাওয়া গেল কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা সাব অ্যাসিসটেন্ট অফিসার ডা. নুরুল আফসারকে। বিদ্যুৎহীন, পরিত্যক্ত ঘরে বসে ঘামছিলেন তিনি। দুপুর ১২টা নাগাদ কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, এ কেন্দ্রটিতে মেডিকেল অফিসার, সাব অ্যাসিসটেন্ট মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এমএলএস, অফিস সহকারীসহ পাঁচজনের পদ রয়েছে। কিন্তু আমাকে একাই চালাতে হচ্ছে। পদ খালি থাকলেও বাকিদের নিয়োগ দেওয়া হয়না। আশপাশে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় সদ্য সিলেট থেকে বদলি হয়ে আসা এ মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ফেনী জেলা শহর থেকে যাওয়া আসা করছেন। তবে শিগগির বদলি নিয়ে চলে যাবেন তিনি।

ওষুধ স্বল্পতা ও অবকাঠামো সম্পর্কে নুরুল আফসার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটিতে কোনো রকমে কাজ চালাচ্ছি। এখানে তেমন ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। রোগীদের কোনো জটিল রোগ হলে পরীক্ষা করানোও যায়না। জ্বর, কাশি, মাথা ব্যাথা, আর এলার্জিসহ সামান্য কিছু রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ’

এমন অবস্থা শুধু চর চান্দিয়ায় নয়- সোনাগাজী উপজেলার অনেক স্থানেই চিকিৎসা সেবার এমন চিত্র। অনেক এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোতেও চিকিৎসকের দেখা মেলে না। এ কারণে এখানকার মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার নারী আর শিশু চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এ বিষয়ে ডা. নুরুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপকূলীয় এ অঞ্চলটিতে পানির সমস্যা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে অসুখ অনেক বেশি। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই।

এখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য যে বিরাট জায়গা রয়েছে, তাতে মোটামুটি ৩০ বেডের একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এমনকি চিকিৎসকদের কোয়ার্টারও নির্মাণ সম্ভব। যেটি করলে চিকিৎসকদের আর ভিন্ন শহর থেকে এখানে কাজ করতে
আসতে হবে না।

চর খন্দকারের জেলেপাড়ার রঞ্জনা জলদাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকে দুই এক ঘণ্টা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তারকে পাওয়া যায়। এরপর কিছু হলে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারই ভরসা।

স্থানীয় ইউনয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন খোকন বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের নামে ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে তিন বছর ধরে শুধু সীমানা প্রাচীর নির্মাণই হয়েছে, অন্য কার্যক্রমের অগ্রগতি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
জেপি/এএটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।