ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

আশ্রয় মিলেছে, অধিকার মেলেনি

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
আশ্রয় মিলেছে, অধিকার মেলেনি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) থেকে:  আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় মিললেও অধিকার মেলেনি নদীগর্ভে সহায়-সম্পত্তি হারানো উপকূলের ভাগ্যবঞ্চিতদের। জীর্ণ হয়ে আসা ঘরগুলোতে কোনরকমে বেঁচে আছে তারা।

প্রায় ‍দুই দশক আগে এ প্রকল্প নির্মাণের সময় বাসস্থানের পাশাপাশি চাষযোগ্য জমি, গবাদী পশু ও চাষের বীজ দেওয়ার কথা থাকলেও আশ্রয়টুকু ছাড়া আর কিছুই মেলেনি অনেকেরই।
 
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ও চরজুবলী ইউনিয়নের ১৪শ’ পরিবারের জন্য ১৯৯৮-৯৯ সালে সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সহযোগিতায় যে আশ্রয়ন প্রকল্পটি নির্মাণ হয়, যেখানে একটি ব্যারাকে ১০টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থ‍া।
 
তবে সময়ের বিবর্তনে সেসব ঘরের টিনের ছাউনি ভেঙে পড়ছে, নলকূপগুলোও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।   শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সেবাও অপ্রতুল।   অনেকেরই আবার সংসার বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি মাত্র কক্ষে থাকতে না পেরে তারা অন্য স্থানে চলে যাচ্ছেন।

কয়েকটি ব্যারাক ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এসব ভূমিহীনের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে বিনা সুদে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার কথা। অনেকেই সে ঋণের দেখা পায়নি। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্যানিটারি টয়লেট, টিউবওয়েল এমনকি শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে স্কুলও স্থাপন করা হয়েছিল। সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি ব্যারাকে একটি করে কমিউনিটি সেন্টারও করা হয়।    

তবে এখন সেসবের অস্তিত্ব নেই। তৈরির পর থেকে মেরামত না করায় ঘরগুলোর অবকাঠামো ধসে পড়েছে প্রায়। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে এসব ঘর এখন বাতাস হলেই নড়বড় করে, বৃষ্টি হলেই ভেসে যায়। এছাড়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণ, জমি কিংবা অন্যান্য সুবিধা না পেয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসেনি কারোরই।

প্রকল্পটি মূলত: ভূমিহীনদের জন্য হলেও, সেসব ভূমিহীনদেরও মাসিক ভাড়া দিয়ে সেখানে থাকতে হয়। এর অন্যতম কারণ রাজনৈতিক দলের মধ্যস্থতায় স্বাবলম্বীদের অনেকেই সেসব ঘরের মালিকানা পায়। আবার প্রতি ব্যারাকে চালু করা সমবায় সমিতিও জমা দেওয়া টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

চরবাটা ব্যারাকের হতদরিদ্র বাসিন্দা জাহানারা বেগমের সঙ্গে আলাপ হয়। স্বামীকে হারানোর পর নদী ভাঙনে সহায়হীন হয়ে পড়া এই নারী চার সন্তান নিয়ে মাসে চারশ’ টাকা ভাড়া দিয়ে ব্যরাকের একটি ঘরে থাকেন। ঘরটির মূল মালিক আতিয়ার রহমান কখনই সেখানে থাকেননি। কারণ, অন্যত্র ভিটে মাটি আছে তার।
 
বাংলানিউজকে জাহানারা বলেন, আমার ১৪ বছরের বড় ছেলে চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে। পাঁচমুখের সংসারে সেই একমাত্র উপার্জন করে।

শামসুন্নাহার  নামে আরেক নারী বলেন, ১৬ বছর আগে এখানে আশ্রয় নিই। কতোকিছুই দেওয়ার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু কোন কিছুরই মুখ দেখিনি। রাজনৈতিক নেতাদের সাঙ্গপাঙ্গরা চাষের জমি হাতিয়ে নিয়েছে।

হাজেরা খাতুন বলেন, আমরা শুধু আশ্রয় পেয়েছি। কিন্তু চাষের জমি, এক জোড়া গরু, চাষের বীজসহ অন্যান্য যে সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো পাওয়া আমাদের অধিকার, সে অধিকার কেউই দেয়নি আমাদের। শুধু আশ্রয় পেলে কী জীবন বাঁচে?

আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ব্যারাক সংলগ্ন নলকূপ থাকলেও সেগুলো বিকল হয়ে আছে। ভাঙা টয়লেট পরিবেশও আরো অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। স্কুলগুলোতেও নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হয় না। ফলে শিশুরা ঝুঁকে যাচ্ছে কাজের দিকে।

এমন অবস্থায় সরকারের সহায়তা চেয়েছে ব্যারাকে বসবাসকারীরা। অধিকার বঞ্চিত মানুষদের এই নির্মম ভাগ্যের কথা জানলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কিছুই করে উঠতে পারছে না প্রশাসন।

এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুণ অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যারাকে বসবাসকারীদের অনেকেই জমি বরাদ্দ পাচ্ছেন। তবে কিছু সমস্যা তো আছেই।

এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
জেপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।