ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠে না ওদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠে না ওদের

চর বায়েজিদ, সুবর্ণচর, নোয়াখালী থেকে:  রাস্তার দু’পাশ জুড়ে সারি সারি গাছ, পুকুরে মাছের মাতামাতি, পাড় ভর্তি হরেক রকম সবজি, গোয়াল ভর্তি গবাদি পশু। এসবই যেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এক অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য।

কিন্তু সাজানো-গোছানো এ অঞ্চলটির বিভিন্ন প্রান্ত প্রতিদিন যাচ্ছে নদী গর্ভে। বিলীন হচ্ছে ভিটে মাটি। আর নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।

অথচ এই ভাঙন ঠেকাতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। নিজ চেষ্টায় জীবন বদলানো শুরু করতেই আবারও ভাঙনের কবলে পড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। বারবার নদীর আগ্রাসনে পড়ে ‘ঘুরে দাঁড়ানোই’ হয়ে ওঠে না ওদের।

সরেজমিনে চর বায়েজিদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায় মাইলের পর মাইল গ্রাম এখন মেঘনা নদীর পানির নিচে। নদীর তীরে এখনও ভাঙা বাড়ি-ঘরের চিহ্ন। কিছুদিন আগেও যারা একসঙ্গে বসবাস করতেন, ঘর হারিয়ে এখন কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে কেউ জানে না।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছরে চর বায়েজিদের জনতা বাজার থেকে কাটাখালি পর্যন্ত নদী ভাঙনে ঘরহারা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দেখা মেলে জেলে রফিকের, যিনি গত দুই বছরে দুইবার নদী ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়েছেন।

প্রথমবার ভোলার এই বাসিন্দার সর্বস্ব কেড়ে নেয় মেঘনার নদী ভাঙন। স্বচ্ছল গৃহস্থ থেকে নিঃস্ব হয়ে তিনি আশ্রয় নেন নোয়াখালী সুবর্ণচরের চর বায়েজিদে। সেখানে বসবাসের একটুকরো জমির ছোট্ট পুকুরে মাছ চাষ ও হাঁস পালনের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে সবজি চাষ করেন। ছিল কয়েকটি গবাদিপশুও। যা দিয়ে অনেক চেষ্টায় দিন ফেরাতে শুরু করেছিলেন রফিক।
কিন্তু সেই সুখের মুখ দেখতে না দেখতেই এখানেও সেই রাক্ষুসে মেঘনার আক্রমণ। আবারও মেঘনা গিলে নেয় তার বসত ভিটা ও যাবতীয় স্বপ্ন। গবাদি পশুগুলো বেঁচে শেষ সম্বলটুকু হাতে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে উঠেছেন।

আক্ষেপের সঙ্গে রফিক বলেন, ‘নদীর একূল ভাঙে আর আরেক কূল গড়ে। কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো উন্নতি হয় না। আমরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যেটুকু কামাই করি, নদীর বুকে চলে যায় তার সবই। স্বচ্ছল গৃহস্থ থেকে আমরা কামলায় পরিণত হই। ’

কিছুদূর এগুতেই দেখা হয় হাজেরা খাতুনের (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বয়সে দুই বার ভাঙনের কবলে পড়েছি। প্রথমবার গেছে স্বামীর বাড়ি, পরের বার গেছে নিজের বাড়ি। এখন মাথা গোঁজার মতো আর কিছুই নেই। ’

এদিকে ভাঙন প্রতিদিনই বাড়ছে। ভাঙনকবলিত এলাকাটিতে এখনো যাদের বাড়ি ঘর সুরক্ষিত আছে, তারা প্রতিনিয়তই শঙ্কায় থাকেন কখন যাবে তার বাড়িটিও। এদের অনেকের রয়েছে লাখ টাকার সবজি ক্ষেত, মাছের ঘের। যেকেনো সময় মেঘনা গ্রাস করে নিতে পারে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভলটুকু।

সংগ্রামী এসব মানুষের একটাই দাবি, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার তাদের ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু তাদের সে আর্তনাদ শোনার যেন কেউ নেই। সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু কেউই তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে না।

রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এমপি একরামুল হক চৌধুরী অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাঙন প্রতিরোধে সিমেন্টের স্লাভ বসানোর কথাও বলেছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেননি তিনি।

রফিক জানান, নদীর কবলে পড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্বচ্ছল গৃহস্থ মজুরে পরিণত হচ্ছেন।

তবে নদী ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সুবর্ণচর ইউনিয়নের নির্বাহী কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সর্বস্ব হারানোর শঙ্কা এখন সুবর্ণচরের বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের নিত্য সঙ্গী। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬  
জেপি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।