কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ফেরি করে ডিম বিক্রেতা ১১ বছরের জুবায়ের এভাবেই প্রকাশ করছিলো তার স্বপ্নের কথা।
একই অবস্থা মামুনেরও।
শিশু বয়সেই সংসারের হাল তাদের কাঁধে। যে সময়টায় সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে-খেলাধুলায় কাটানোর কথা, সে বয়সেই পরিশ্রম করতে হচ্ছে। প্রতিদিন রোজগারের চিন্তায় ডিমের বালতি হাতে নিয়ে ফেরি করতে হচ্ছে।
পরিবারের সঙ্গে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নের কুয়াকাটার পাঞ্জিপাড়া এলাকার ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসবাস জুবায়েরের। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। শুক্রবার সারাদিন এবং অন্যান্য দিন স্কুলের ছুটি শেষে ডিম বিক্রি করে জুবায়ের।
জুবায়ের জানায়, তার বাবা এসহাক রাজমিস্ত্রি ছিলেন, ৭ বছর আগে লিভারের অসুখে মারা যান। টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি, ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছে তাকে। ঘরে মা এবং দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। মেঝ ভাই জুয়েল ১ম শ্রেণিতে পড়ছে, বাকিরা ছোট।
সারাদিন সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মায়ের কাছে তুলে দেয় জুবায়ের। সে টাকা দিয়ে তেল-নুন, চাল-ডাল কেনার যোগাড় হয়। কখনো আবার সবাইকে না খেয়েও কাটাতে হয়।
জুবায়ের বলে, ‘যতো কষ্টই হোক না কেন, ভাই-বোনদের পড়ালেখা করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করবো। নিজে চিকিৎসক হয়ে রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা করাবো’।
ডিম বিক্রি করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পর্যটকদের দুর্ব্যবহার ও মারধরের শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ জুবায়েরের।
সে জানায়, যখন বিচে পর্যটক কম থাকেন, তখন সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ডিম বিক্রেতা জুবায়ের-মামুনদের স্বপ্ন পূরণ হয় না, সাগরে ঢেউয়ের সঙ্গেই যেন মিশে যায়। তারপরও মনোবল না হারিয়ে দারিদ্র্য দূর করতে কঠিন পরিশ্রম করে যায় ওরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এএসআর