সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা বঙ্গোপসাগরের অন্যতম চর দুবলার চর। দুর্গম ওই চরে নদী পথ ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ শুটকি পল্লী থেকে জেলেরা যেমন তাদের জীবন জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আয় করেন। তেমনি সরকারও বড় ধরনের রাজস্ব আয় করে। তবে দারুণভাবে অবহেলিত এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেরা। জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, বিভিন্ন প্রকার দোকানদার (নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বিক্রেতা), সাদা মাছ ব্যবসায়ীসহ দুবলার চরে প্রায় ৩০-৪০ হাজার লোক পাঁচ থেকে ছয় মাস অবস্থান করে।
এছাড়া মাঝের কিল্লা, মেহের আলীর চর, নারকেল বাড়িয়া ও শেলার চরেও ২০ হাজার লোক থাকে এ মৌসুমে। এ পাঁচটি চরে মোট ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক পাঁচ-ছয় মাস অবস্থান করে। দুর্ঘটনা ও অসুস্থতায় শুধুমাত্র পল্লী চিকিৎসকের (এলএমএএফপি) ওপরই ভরসা করে থাকতে হয় তাদের।
বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনের গভীরে দুবলার চর জেলে পল্লী ঘুরে দেখা যায় জেলেদের মানবেতর জীবনযাপন। জেলে পল্লীর কয়েকটি ঘরে অসুস্থ জেলের দেখা পাওয়া গেল। তার মধ্যে একটি ঘরে জসিম (৩৫) নামে একজন অসুস্থ জেলের সঙ্গে কথা হয়।
জসিম বলেন, তিনদিনের জ্বরে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছি। উঠতে পারছিনা। ডাক্তার সাহেবের (আনোয়ার হোসেন, পল্লী চিকিৎসক) কাছ থেকে ওষুধ এনেছি। স্যালাইনও দিয়েছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ অবস্থা শুধু জসিমের নয়। আরও অনেকের।
পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনের চেম্বারে (দোকান) গিয়ে দেখা যায় একটি অস্থায়ী খড়ের ঘরের মধ্যে তিনি বসে আছেন। সঙ্গে একটি টেবিল, চেয়ার আর আলমিরায় কিছু ওষুধ।
আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বছর ধরে আমি শুটকি মৌসুমে এখানে আসি। জেলেদের সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। তবে সব রোগের চিকিৎসা করতে পারি না। তারপরও জেলেরা আমার কাছে আসে।
রহিম শেখ, মনির, লাভলু শেখ, গাজী মহিউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জেলে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পাঁচ থেকে ছয় মাস থাকি এখানে। দুর্ঘটনা ও শারীরিক রোগে আমাদের ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এখানে কিছু ডাক্তার ওষুধের দোকান নিয়ে আসেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যা বলেন, যে ওষুধ দেন তাই খেতে হয়। ওষুধের দামও অনেক বেশি। অনেক বেশি অসুস্থ হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ধরে মোংলা যেতে হয় চিকিৎসা সেবা নিতে। এটা খুবই কস্টের ও ব্যয়বহুল।
শুটকি মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করার দাবি জানান জেলেরা। দুবলার ফিশারম্যান গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনুর রহমান শামীম বাংলানিউজকে বলেন, একসময় এ পল্লীতে শুটকি মৌসুমে মেডিকেল টিম আসত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। জেলেদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শুটকি মৌসুমে একটি মেডিকেল টিম খুবই প্রয়োজন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শুটকি মৌসুমে এই চরে একটি মেডিকেল টিমের জন্য আমরা চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ০৮ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ