ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠেছিল পরিকল্পিত শহর। একটা সময় সে শহর হারিয়ে যায় নদীগর্ভে।
কালের বিবর্তনে এ জনপদটি ভাঙন থেকে রেহায় পেয়ে আবার জাগতে শুরু করেছে। নদী-সাগরের বুকে জাগছে নতুন নতুন চর। আর সেই সব চরকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন দ্বীপের মানুষেরা। তাদের জন্য স্বপ্নে নতুন করে
শূন্য চরে বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথাও ভাবছে সরকার।
এমন আশার কথাই শোনালেন চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলাটির নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূরুল হুদা।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, ৫০ এর দশক থেকে যে ভাঙনে চিহ্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সন্দ্বীপ, ২০০০ সাল থেকে তা থেকে রক্ষা পেয়ে সাগর আর মেঘনার বুকে জেগে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন চর। ৭০ বর্গমাইল থেকে সন্দ্বীপের বর্তমান আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে ২০০ বর্গমাইলে।
ইউএনও নূরুল হুদা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোকে রক্ষা করতে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধসহ মেরিন ড্রাইভ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
‘এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বেড়িবাঁধকে ঘিরে রাস্তা হওয়ার কারণে আন্তঃযোগাযোগ বাড়বে, প্রসার হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। ’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সন্দ্বীপের জেগে ওঠা চরগুলো নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সন্দ্বীপের সবুজ চর জরিপ করে গেছেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিমার্ণ কর্তৃপক্ষ। এখানে যদি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হয় তাহলে দ্বীপের বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। তারা আর বাইরের জেলায় পাড়ি জমাবেন না।
‘এছাড়া নতুন জেগে ওঠা চরগুলোতে যদি সঠিক ব্যবস্থাপনায় নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাহলে সেখানে মৎস্য প্রকল্প করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন জেলেরা। সনাতন মৎস্য শিকার থেকে বেরিয়ে নিরাপদ জীবিকার দিকেও ফিরতে পারবে তারা। ’
এদিকে নতুন জেগে ওঠা এসব চরকে ঘিরে প্রশাসন-সরকার অনেক কিছুর পরিকল্পনা হাতে নিলেও নদী শিকস্তিদের (নদী ভাঙনের শিকার মানুষ) শঙ্কা কিন্তু কম নয়।
তারা বলছেন, আদৌ কী আমরা চরের জেগে ওঠা ভূমির বন্দোবস্ত পাবেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। সাগর ও নদীতে সব হারিয়ে নতুন চরে এক টুকরা জায়গার জন্য মুখিয়ে আছেন বাসিন্দারা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, আমিরাবাদ, বাটাজোড়া, ইজ্জতপুর, দীর্ঘাপাড়, রুহিনী ও ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন মেঘনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় অনেক বছর আগে। এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষরা সব হারিয়ে অন্যত্র কোনো রকমে বসবাস করছেন।
অনেক বছর পরে নদীতে বিলীন হওয়া সেসব ইউনিয়নের জায়গা জেগে ওঠতে শুরু করেছে। জেগে ওঠা চরগুলোর নতুন নাম ঠেঙ্গারচর (ভাষাণচর) ও জাহাইজ্জারচর (স্বর্ণদ্বীপ)। নতুন এই চরের সীমানা নিয়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে
এর মধ্যে স্থানীয়রা দাবি করছেন, নতুন জেগে ওঠা ঠেঙ্গারচর সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন। তাই এখানকার জমি বন্দোবস্ত চান তারা।
বর্তমানে জাহাইজ্জারচর সেনাবাহিনী এবং ঠেঙ্গারচর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এরপরও এসব এলাকায় ঘর-বাড়ি হারা মানুষগুলোর ঠাঁই হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় লোকজন।
ভাঙন কবলিত এলাকা রহমতপুরের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন, রফিকসহ আরও কয়েকজন বাংলানিউজকে জানান, ভাঙনের কারণে বছরে কয়েকবার করে বাড়ি বদলানোর ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় কষ্ট। মাথা গোঁজার এক টুকরো ঠাঁই নেই বলে কোনো রকমে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তারা।
নতুন জেগে ওঠা চরগুলোতে যদি তাদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয় তাহলে বেঁচে থাকতে থাকবেন এসব মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা দুর্যোগে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সন্দ্বীপের লোক ক্রমেই কমছে। দ্বীপ ছেড়ে শুধু চট্টগ্রাম নগরী-ই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও আবাস গড়ে তুলছেন এখানকার মানুষ।
নতুন জেগে ওঠা চরগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনা করা গেলে জন্মভূমি ছেড়ে অন্যত্র যাবে না সন্দ্বীপবাসীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
এসএইচডি/এমএ