সন্ধ্যা থেকেই বাতাস বইতে থাকে ২৫০ কিলোমিটার বেগে। রাতের জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট।
এভাবেই ২৯ এপ্রিলের ভয়বহতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেই ঘূর্ণিঝড়ে ২০ আত্মীয়-স্বজন হারানো আকতার কামাল। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম বলেন, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা লণ্ড-ভণ্ড হয়। সেই রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা এতোই তীব্র ছিল যে দাফন করার জন্য স্বজনদের লাশও খুঁজে পায়নি অনেকে। আবার পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় কোনটা কার বাড়ি তা চিহ্নিত করারও কোনো উপায় ছিল না। ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে পড়লে এখানো চোখের কোণে অশ্রু জমে। আজীবন সেই দুঃসহ স্মৃতি উপকূলবাসীকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
২৭ বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনও উপকূল রয়ে গেছে অরক্ষিত। উপকূলের মানুষের সুরক্ষার জন্য গড়ে ওঠেনি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা। নির্মাণ হয়নি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ঝাউগাছের বাগান করার কথা থাকলেও তার কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই এখনও শংকা কাটেনি উপকূলীবাসীর।
এ বিষয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন,২৯ এপ্রিলের মতো প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড় আর হবে না এমন তো নয়। যদি হয়, তাহলে এখন আরো বেশি মানুষ হতাহত হওয়ার শংকা রয়েছে। কারণ এখনও উপকূল সুরক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি, ঝাউগাছের বাগান করার কথা ছিল। প্রকল্পটি শুরুও হয়েছিল। কিন্তু পরে বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, এপ্রিল মাস এলেই ধলঘাটায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় ২৭ বছর পরও স্থাপিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লেন শেল্টার।
কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, কুতুবদিয়ার সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ২৭ বছরেও নির্মাণ করতে না পারা দুঃখজনক।
কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ক ম শাহরিয়ার জানান, কুতুবদিয়ায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ দরকার। প্রতিবছর বেড়িবাঁধ করা হয়, আর প্রতিবছরই নষ্ট হয়। এই বেড়িবাঁধ নিয়ে চলে দুর্নীতি। এতে সরকারের টাকাও নষ্ট হয়, কাজের কাজও কিছুই হয় না।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় ও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখনও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মাতারবাড়ির মানুষ।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু বলেন, উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের জেটিঘাটের উত্তর পাশ, উজানটিয়া ইউনিয়নের টেকপাড়া, সৈকত পাড়া, করিয়ারদিয়া, রাজাখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গার মুখ থেকে হাজি মার্কেট, সুন্দরী পাড়ার কিছু অংশ ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা থেকে সারের গুদাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার বেড়িবাঁধ এখনও অরক্ষিত।
বান্দরবান জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী রাকিবুল হাসান জানান, কুতুবদিয়ায় নৌ-বাহিনীর মাধ্যমে ৯৭ কোটি টাকার ও ঠিকাদারের মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। উপজেলায় সাড়ে চার কিলোমিটার সিসি ব্লক এবং নয় কিলোমিটার মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বাংলানিউজকে বলেন, ২৯ এপ্রিলের ক্ষত এখনও শুকায়নি। স্বজনহারানোর শোকে এখনও চোখে জল আসে। বর্তমান সরকার উপকূলের মানুষের সুরক্ষার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দুই উপজেলায় ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। এই সরকার যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘন্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৮
টিটি/এসআই