ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

৯ বছরেও আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
৯ বছরেও আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: ভয়াল ২৫ মে আজ। ২০০৯ সালের এদিনে প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় গোটা উপকূলীয় এলাকা। ১৫ ফুট উচ্চতায় ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায়। এতে শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭৩ জন নিহত হন। গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুর।

আইলার নবম বর্ষপূর্তি হলেও এখনও সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ। কাজ, খাবার ও সুপেয় পানির অভাবে আইলায় বিধ্বস্ত উপকূলীয় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে।

টিকে থাকতে না পেরে অনেকেই চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ ভাঙনে বাড়ছে গৃহহীনের সংখ্যা।

আইলা দুর্গত গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, খুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে বাস করছেন গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষ। লবণাক্ততার কারণে কৃষি কাজ নেই বললেই চলে। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে এলাকা ছাড়ছে অনেকেই। বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় জনপদ। সুপেয় পানির জন্য চলছে চরম হাহাকার। কোনও মতে, দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবন চলছে তাদের। নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও।

বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট গোটা উপকূল জুড়ে। প্রচণ্ড লবণাক্ততায় জনপদ বৃক্ষরাজি শূন্য হয়ে পড়েছে। জ্বালানি, খাবার পানি ও কর্মসংস্থানের সংকট মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লোনা পানির চিংড়ি চাষ।

লবণাক্ততা মোকাবেলা করে কোনও কোনও জমিতে ধান চাষ সম্ভব হলেও অধিকাংশ কৃষিজমি রয়েছে অনাবাদী। কাজ ও জ্বালানি সংকটের কারণে সুন্দরবনের ওপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। ছবি: বাংলানিউজসেই সঙ্গে বেড়েছে রোগ-শোক, অপুষ্টি, বাল্যবিয়ে, বহুবিয়ে, যৌতুক প্রবণতা ও শিশুশ্রম।

গাবুরার আবু মুছা বাংলানিউজকে জানান, এলাকায় কোনও কাজ নেই। লবণ পানির চিংড়ি চাষ যত বাড়ছে, কাজ তত কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, লবণ পানির চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে হবে। না হলে এই জনপদের মানুষ না খেয়ে মরবে। এখানে কোনও মানুষ থাকতে পারবে না।

পদ্মপুকুরের জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এখনও ঠিকমত সংস্কার করা হয়নি। যতদিন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হবে, ততদিন আইলার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। বার বার বাঁধ ভেঙে আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। এলাকায় লবণ পানি ঢুকলে আর ফসল হয় না। মিষ্টি পানির আধারগুলো লোনা হয়ে যায়। আর খাওয়ার পানি থাকে না।

স্থানীয় পরিবেশ গবেষক পিযুষ বাউয়ালী পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, এলাকায় মানুষের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি বিরাজ করছে। আইলায় খাদ্য নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে লবণাক্ত মোকাবেলা করে আবার ধান চাষের চেষ্টা করছেন। তাদের এ প্রচেষ্টায় সরকার সহযোগিতা না করলে কোনোদিনও তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এজন্য স্থানীয় সরকারি খালগুলোর বন্দোবস্ত বাতিল করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ ও জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এলাকায় কিছু ফলাতে হলে এর আর দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই।

শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বাংলানিউজকে জানান, গোটা উপকূলীয় এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। মানুষ পুকুরের পানি খেয়ে বেঁচে থাকে। তাও পাওয়া যায় না। তাই খাবার পানির সংকট নিরসনে এলাকার পুকুর-জলাশয়-জলাকারগুলো পুনঃখননের পরে ব্যবহার উপযোগী ও মিষ্টি পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যতদূর সম্ভব লোনা পানির চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে হবে। লোনার কারণে মানুষ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

আইলায় বিধ্বস্ত দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাকসুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, শুধু গাবুরা নয়, উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষের নিরাপদ জীবনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ। বার বার বাঁধ ভেঙে আমাদের সব অর্জন ম্লান করে দিয়ে যায়। খাবার পানিটুকুও থাকে না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।