ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের মানুষ রাজনীতি বোঝে না, চায় উন্নয়ন 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
উপকূলের মানুষ রাজনীতি বোঝে না, চায় উন্নয়ন  চরের উন্নয়ন যজ্ঞ

ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল উপকূল থেকে ফিরে: শীতের সকালে আড়মোড়া ভেঙে সবে রোদ ছড়াতে শুরু করেছে। আমাদের গন্তব্য ছিল চর কুকরী মুকরী। চর কচ্ছপিয়া খেয়াঘাটে একটি খেয়ায় (ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা) বসে অপেক্ষা করছিলাম, খানিক পরে ঘাট ছেড়ে খেয়া রওনা হওয়ার কথা। 

খেয়ার এক কোণে বসে আছে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ও এক নারী। গল্প জমিয়ে দিলাম তাদের সঙ্গে।

কথা বলে জানা গেল তারা দু’জন স্বামী-স্ত্রী। চর কুকরী মুকরীতেই তাদের বসত। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ খলিলুর রহমান জানান, তিনি ও তার স্ত্রী প্রায় ৪০ বছর আগে ভোলার চর ফ্যাশন থেকে এসে এ চরে বসতি গড়েছেন।

গল্প হচ্ছিল চরে তাদের জীবনযাপনের নানা দিক নিয়ে। এক ফাঁকে উঠে আসে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নির্বাচন প্রসঙ্গ। খলিলুর রহমান জানান, ‘বাপজান আমরা রাজনীতি বুঝি না, আমরা চাই চরের উন্নয়ন, বিগত ১০ বছরে আমাদের চরের অনেক উন্নয়ন হয়েছে আর সে কারণেই আমরা আবার তাদের ভোট দিয়েছি’।  তিনি জানালেন তাদের চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন দুই মেয়াদে যে উন্নয়ন করেছেন তা বিগত ৫০ বছরেও হয়নি।  

বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা সেতু-ছবি-বাংলানিউজগল্প চলছে এদিকে খেয়া ছেড়ে গেছে চর কচ্ছপিয়া ঘাট। এবার গল্পতে আর মন বসছিল না। চোখ চলে যাচ্ছে নদীর দু’পাড়ের সবুজ প্রকৃতির দিকে। নদীর দু’পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা আর প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে দু’ঘণ্টা পার হয়ে গছে আঁচও করতে পারিনি। তখন বেলা ১২টা। আমাদের নামিয়ে দেওয়া হলো কুকরী-মুকরী লঞ্চ ঘাটে। ঘাটে গিয়ে কল দিলাম চেয়ারম্যান হাসেম মহাজনকে, তিনি বললেন একটা মোটরসাইকেল ভাড়া করে বন বিভাগের রিসোর্টে চলে যেতে। সেখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা। চরে যোগাযোগের অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল। এ বাহন ছাড়া সেখানে আর অন্য বাহন তেমন একটা নেই বললেই চলে।  

ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উঠে যাচ্ছিলাম রিসোর্টের দিকে। মাটির রাস্তা হয়ে চলছিল মোটরসাইকেল। মনে করছিলাম দুর্গম চর, মাটির রাস্তাই হয়তো বেশী। ১ মিনিটের মাথায় আমাদের মোটর সাইকেল উঠে ইট-সিমেন্টের একটি পাকা রাস্তায়। এরপর যতদূর গেছি আর মাটির রাস্তা চোখে পড়েনি।
 
২০ মিনিট পর আমাদের মোটরসাইকেল এসে থামলো বন বিভাগের রিসোর্টের সামনে। রিসোর্টের বাইরে থেকে দেখেই তো অবাক। এই দুর্গম চরে এত সুন্দর প্রাসাদ!

চেয়ারম্যান হাসেম মহাজনের কল পেয়ে কেয়ারটেকার হানিফ আমাদের নিয়ে গেলেন রিসোর্টের ভেতরে। ভেতরে গিয়ে তো চোখ ছানাবড়া। সুইমিং পুল, সুপ্রশস্ত ডাইনিং, তিন তারকা মানের থাকার ঘর। কল্পনা করা যায় না গহীন চরে বিশাল এ যজ্ঞ।

 চর কুকরী মুকরীতে তিন তারকা মানের রিসোর্ট-ছবি-বাংলানিউজবন বিভাগের চর কুকরী-মুকরীর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ রিসোর্টটি। এতে মোট ১৬টি রুম রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি ভিআইপি এবং ১৪টি সাধারণ রুম রয়েছে। এর পাশেই গড়ে উঠছে ইকো পার্ক।  

চর কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন জানান, বিগত কয়েক বছরে তার ইউনিয়নে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ২৫০ পরিবারের জন্য দু’টি গুচ্ছগ্রাম, তিনটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার, তিনটি ব্রিজ, দুইটি বাজার উন্নয়নসহ তিন তারকা মানের সরকারি রিসোর্টের কাজ হয়েছে। হাসেম মহাজন জানান, বিগত ১০ বছর আগে এখানে কোনো পাকা রাস্তা ছিল না, এখন সেখানে মাটির রাস্তা খুঁজে পেতে কস্ট হবে। বর্তমান সরকার চরের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন।  

চরে একরাত কাটিয়ে পরের দিন আমাদের গন্তব্য পটুয়াখালীর কালাইয়া। জলপথ-স্থলপথে ভোলার চর ফ্যাশনে পৌঁছে আরেক চমকপ্রদ বিষয় জ্যাকব টাওয়ার। দেখে মনে হয় এতো বাংলাদেশ নয়, অন্য কোনো দেশে এসে পড়েছি।  

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের একান্ত চেষ্টা ও শ্রমে এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। টাওয়ার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর উচ্চতা ২২৫ ফুট। ১ একর জমিতে টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চরফ্যাশন পৌরসভা। টাওয়ারটির নকশা করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। মাটির ৭৫ ফুট নিচ থেকে ঢালাই-পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর সম্পূর্ণ ইস্পাত নির্মিত এই টাওয়ার ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে। ভূমির উপর থেকে টাওয়ারের ওপরে অবস্থিত গম্ভুজ আকৃতির ওয়াচ পয়েন্ট পর্যন্ত চারদিকে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর রয়েছে ৫ মিলিমিটার ব্যাসের স্বচ্ছ কাঁচ। এর চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ার চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে উচ্চক্ষমতার বাইনোকুলার। এর সাহায্যে পর্যটকরা দূরবর্তী স্থান দেখতে পারেন।

ভোলার চর ফ্যাশনে জ্যাকব টাওয়ার -ছবি-বাংলানিউজজ্যাকব টাওয়ার দেখার পর ভোলার লালমোহন ও নাজিরপুর হয়ে স্থল ও জলপথ পেরিয়ে আমরা পৌঁছায় পটুয়াখালী কালাইয়া লঞ্চ ঘাটে। সেখান থেকে বাউফল উপজেলা হয়ে বাসে করে রওনা করি বরিশালের দিকে। যেতে যেতে দেখা মেলে সরকারের আরও নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের।  

বিশেষভাবে নজর কাড়ে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা সেতুর (লেবুখালী সেতু)। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে পটুয়াখালী ও পায়রা বন্দরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে ফেরি ভোগান্তি কমবে। তার পাশে নির্মিত হচ্ছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস।  

বরিশাল শহরে ঢোকার আগে চোখে পড়ে খয়েরাবাদ নদীর উপর খয়েরাবাদ সেতু ও কীর্তনখোলা নদীর উপর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু। বরিশালের সহকর্মী মুশফিক সৌরভ জানালেন, এ দু’টি সেতুও নির্মাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর-ভোলা-পটুয়াখালী ও বরিশাল উপকূল ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১০ বছরে উপকূলে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। তাই উপকূলের মানুষের সমর্থন এ সরকারের প্রতিই।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
এসএইচডি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।