ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জেলে জীবন

বাবাহীন আয়শার ঈদ

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
বাবাহীন আয়শার ঈদ মায়ের কোলে বসা শিশু আয়শা। ছবি: বাংলানিউজ

প্রান্তিক উপকূলের জেলে পল্লী থেকে ফিরে: চার মাস বয়সের শিশু আয়শা। বাবা হিরু মিয়া সাগরে যাওয়ার দিন ঘুমের ঘরে আয়শার গালে চুমু দিয়ে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান অথৈ সাগরে।

হিরুর ইচ্ছে ছিল সাগর থেকে ফিরে মেয়ে আয়শার জন্য দুধ এবং নতুন জামা কাপড় নিয়ে আসবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি।

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান মেলেনি।

চার মাসের শিশু আয়শা আজ এক বছর দুই মাস পেরিয়ে। যখনই বাবার কথা মনে পড়ে তখনই নিজের খেয়ালেই আকাশের দিকে দু’হাত উঁচু করে বাবাকে ডাকে, ‘বাবা, বাবা, আব্বা, আব্বা’।

পাথরঘাটা উপজেলা সদরের বাদুরতলা গ্রামের জেলে মো. হিরু মিয়ার অবুঝ শিশু আয়শা। বাবা হিরু মিয়া অনেক আদর করেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন আয়শা। সেই আদরের মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনতে পারবেন না এটা ভাবতেও পারেনি হিরু।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পাথরঘাটার শাহিন ফিটারের মালিকানা মাছ ধরা ট্রলারে হিরুসহ একই গ্রাম থেকে আটজনসহ মোট ১৯ জন জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। এরপর ২১ জুলাই তাদের ট্রলার গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে ওই ট্রলারে থাকা ১৮ জেলে নিখোঁজ হয়। কয়েকদিন পর কয়েকজন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও বিকৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া কয়েকজন জেলেকে গভীর সমুদ্রের একটি দ্বীপে বালুর নিচে চাপা দিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু প্রায় এক বছর হতে চললো আজও ট্রলারসহ নিখোঁজ আট জেলে ফিরে আসেনি।

জেলে পল্লী বাদুরতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ ৮ জেলে পরিবারের আর্তনাদ। আজও পথপানে চেয়ে আছেন তারা। সন্তানহারা বাবা-মা, স্বামীহারা স্ত্রী আর পিতৃহারা সন্তানরা এখনো অপেক্ষায়।

আয়শার মা শারমিন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে যাওয়ার সময় আয়শাকে দুই গালে চুমা দিয়া, মাইয়্যাডারে ঠিকমতো দেখতে কইয়া যায়। তহনও বুঝিনাই মোর স্বামী আর ফিইরা আইবেনা। মোর মাইয়াডা বাবারে আর দেখতে পারবে না। নিজের ঠিক মতো খাওয়া নাই, বুকের দুধও হয়না। টাকাও নাই যা দিয়া দুধ কিন্না মাইয়াডারে খাওয়ামু।  

ঈদের কথা বলতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, মোগো আর ঈদ। ঠিকমতো খাইতে পারিনা, মাইয়াডারে ক্যামনে জামা কাপড় দিমু।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যার যায় সেই বোঝে স্বজন হারানোর কষ্ট। সৃষ্টিকর্তার হুকুম মানতেই হবে। তারপরেও ট্রলার মালিকদের পক্ষ থেকে পরিবারদের জন্য সাহায্যের চেষ্টা চালাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।