বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে উপকূলে আঘাত হেনে সমতলে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এক্ষেত্রে মঙ্গলবার (১৯ মে) শেষ রাত থেকে বুধবার (২০ মে) বিকেল-সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করতে পারে বাংলাদেশের উপকূল।
খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করা হলেও সেগুলোও দীর্ঘমেয়াদি হয়নি।
খুলনাঞ্চলে পাঁচটি উপকূলীয় এলাকার মধ্যে কয়রা ও দাকোপ উপজেলা চারদিকে নদী বেষ্টিত। শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ দু’টি জনপদকে ঘিরে রেখেছে। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া বিরূপ হলে পানির চাপে কোথাও কোথাও ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। উপকূলীয় জনপদের বেশ কিছু জায়গা রূপ নেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। মাঝে মধ্যে গ্রীষ্ম মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢোকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ কয়রায়।
সোমবার (১৮ মে) দুপুরে কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এলাকার বাসিন্দা এম এম সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আতঙ্কে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে উপজেলার হরিণ খোলা, গোবরা, উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ও মহারাজপুরের মানুষ। কেননা এসব এলাকার বেড়িবাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে (লিকেজ) পানি প্রবেশ করছে। জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনও দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দাতা সংস্থানির্ভর এনজিও কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। এছাড়া বহুদিনের পুরোনো বেড়িবাঁধগুলোর টেকসই সংস্কার ও বাঁধ উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দীর্ঘসূত্র ও তৎসংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও চিংড়ি চাষিরা বাঁধগুলো ছিদ্র করে তাদের ঘেরে লবণ পানি তুললেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে নির্বাক প্রশাসন। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা। মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা।
এদিকে, প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণিঝড়ে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার মধ্যে শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করছেন রেডক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ২ হাজার ৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া বেসরকারি এনজিও’র রয়েছে আরও ১১শ’ স্বেচ্ছাসেবক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস/