ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। এছাড়া হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে।
বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় প্রবল গতিতে খুলনাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে আম্পান। রাতভর চলে ঝড়ের তাণ্ডব। শক্তিশালী এ ঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় গোটা এলাকা। ঝড়ের তাণ্ডবে সন্ধ্যা থেকে খুলনায় বিদ্যুৎ বিছিন্ন রয়েছে প্রায় সব এলাকা। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শহরসহ গোটা উপকূলজুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। পুরো ভূতুড়ে পরিবেশে ঘূর্ণিঝড় আম্পান তাণ্ডব চালায়।
শক্তিশালী আম্পান শক্তি হারিয়ে চলে গেলেও গোটা পশ্চিম উপকূলে রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন। সড়কে বড় বড় গাছ পড়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
বাতাস ও পানির বেগে খুলনার কয়রা উপজেলার ১১টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, মহারাজপুর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে গাছ পালা, কাঁচা ঘর-বাড়ি, রাস্তা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বাংলানিউজকে বলেন, কয়রায় ৮টি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ৮টি পয়েন্ট হলো দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকার নিরাঞ্জন ও মাজিদ গাজীর বাড়ির সামনে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোট আংটিহারা এলাকার বাকের গাজীর বাড়ির সামনে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের তসলিম মোল্লার বাড়ির সামনে। দক্ষিণ বেদকাশীর চরামুখা খেয়াঘাট এলাকা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজী পাড়া ও কাশির হাট খোলা। কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয় প্রবেশ করেছে।
এতে অনেকের বসত বাড়িতে পানি উঠেছে। জোয়ার শেষে পানি নেমে যায়। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা স্লুইচ গেটের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণে ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপকূলীয় উপজেলা পর্যায়ে ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত এবং গাছপালা উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বৃহস্পতিবার (২১ মে) ভোর ৬টায় বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার মানুষ ৮১৪টি সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেন। ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অনেক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙেছে বেড়িবাঁধ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দুপুর নাগাদ ক্ষয়ক্ষতি তথ্য জানালে সঠিক পরিসংখ্যান জানা যাবে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। ঝড়ের আঘাতে সাতক্ষীরা সদর থানার কামালনগরে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘর-বাড়ির। ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি।
যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে গাছ পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- চৌগাছার চাঁদপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী খ্যান্ত বেগম ও তার কিশোরী মেয়ে রাবেয়া খাতুন।
এছাড়া বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস/