খুলনা: প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভাঙনে খুলনার উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। লবণাক্ত পানিতে নিমগ্ন থাকার কারণে এলাকার ভৌত অবকাঠামো তথা রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নানা সময় বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ মেরামত ও সংস্কার করা হয়। তবে বাঁধের কাজ হয়ে থাকে দায়সারা গোছের। বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিই যেন ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। কাজেকর্মে নেই কোনো তদারকি। এ কারণে জোড়াতালি মেরামতের পেছনে শত শত কোটি টাকা সরকার খরচ করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বরং পকেট ভারী হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক একটি মহলের।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ‘আম্পান’ বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ উপকূলবাসী। নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছি বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
আম্পানের পর দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যে কারণে দুর্যোগের আতঙ্কে বুক কাঁপছে উপকূলবাসীর।
উপকূলের বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় অধিকাংশ বাঁধের বেহাল দশা। জোয়ার একটু বেশি হলে বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করে। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার করে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, আম্পানের পর প্রায় সর্বত্র নড়বড়ে ও ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় রয়েছে কয়রাসহ উপকূলের বেড়িবাঁধ। এরফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপকূল। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে ইয়াস। এমন খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলবাসী।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বাঁধের যেসব জায়গায় এক বছর আগে আম্পানে ভেঙে গিয়েছিল, সেসব জায়গার সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন জোয়ারে পানি উঠে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যদি আঘাত হানে তাহলে বিস্তীর্ণ কয়রার জনপদ তছনছ হয়ে যাবে।
সোমবার (২৪ মে) পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনাঞ্চলের ৫০০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা ও শ্যামনগরের প্রকল্প দুটি অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আকতারুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর আম্পানে যেগুলো ভেঙেছিলো তা মেরামতের চেষ্টা করেছি। যেসব জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো সেসব স্থানেরও মেরামত করার চেষ্টা করেছি। যতদিন টেকসই বেড়ি বাঁধ না হবে ততদিন পর্যন্ত উপকূলবাসীর দুর্যোগ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
এমআরএম/এনটি