ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

হাজারো মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন সেই সিডর ম্যান জয়দেব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
হাজারো মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন সেই সিডর ম্যান জয়দেব জয়দেব দত্ত। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনা: আজ উপকূলের সেই ভয়াল সিডরের ১৪ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৭ সালের এই দিনে (১৫ নভেম্বর) আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর।

উপকূলের মানুষজন জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংগ্রাম করেই বেঁচে আছে। বেঁচে নেই সিডর ম্যান জয়দেব দত্ত (৬০)। তবে তিনি বেঁচে আছেন মানুষের মাঝে।

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় ২০০৭ সালে দুর্যোগকালীন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের প্রচারণা চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের সদস্য জয়দেব দত্ত।

তিনি ২০০৮ সালে জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। বিটিভিতে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয়েছিল জয়দেবের সে প্রচেষ্টার কথা। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল মোটরসাইকেল। জয়দেব দত্ত সারা বিশ্বে পরিচিত সিডর ম্যান হিসেবে।

১৫ নভেম্বর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার পরে ঘূর্ণিঝড় সিডর মহাবিপদ সংকেত ১০ নম্বরে উঠে যায়। পায়রা নদীতে ২২০-২৫০ কিলোমিটার গতিবেগে তাণ্ডব লীলা শুরু হলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় এলাকা। এতে করে বেড়িবাঁধের বাহিরে ও ভেতরে ঘরবাড়ি মুহূর্তের মধ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদীর পানি তালতলী শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি চলে আসে শহরের ভেতরে। ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় তালতলী বাজার। সিডর ম্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা জয়দেব দত্ত তার প্রচেষ্টায় দিন থাকতেই সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে সক্ষম হন। তার ডাকে সারা দিয়ে সেদিন পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছুটে এসেছিল। আর কিছু মানুষ জয়দেব দত্তকে পাগল বলে তার কথা উড়িয়ে দিয়েছিল। পরদিন দুর্যোগের মাত্রা থেমে গেলে ভেসে উঠে প্রকৃতির ধ্বংসলীলার প্রতিচ্ছবি। সিডরে লাখো মানুষ মুহূর্তেই সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬৪ জন। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, নৌ ও সড়ক পথসহ আধুনিক সভ্যতার সার্বিক অবকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে তালতলী উপজেলা।  

গোটা বিশ্ব প্রকৃতির এ ভয়াল রূপ দেখে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত। তবে সেই বিশ্বখ্যাত সিডর ম্যানের মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে, গণমাধ্যম সূত্রে এমন খবর পাওয়া যায়।

২০১৭ সালের ৫ আগস্ট শনিবার তালতলী উপজেলা রেড ক্রিসেন্টের ওয়ারলেস অফিস থেকে নিজ হাতের লেখা একখানা চিঠি ও দুটি কীটনাশকের বোতল পাওয়া যায়। ধারণা করা যায় কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি বাংলানিউজকে বলেন, জয়দেব দত্তের প্রাণপণ চেষ্টার কারণে তালতলীতে হতাহত কম হয়েছিল।
২ নম্বর ছোট বগী ইউনিয়ন তৌফিকুজ্জামান তনু বাংলানিউজকে বলেন, সিডরের পরে এলাকাবাসীর একটাই দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধের। কিন্তু আমরা দেখছি বেড়িবাঁধের কাজ ঠিকই চলছে কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না নদীর ভয়াবহ ভাঙন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।