চট্টগ্রাম: রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে আছেন নানান বয়সি মানুষ। এক তরুণ প্রত্যেককে দুটি করে প্রশ্ন করছেন আর উত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করছেন কাগজে।
প্রশ্নগুলো হলো- আপনার নাম কি এবং আজ আপনি কি ভালো কাজ করেছেন? উত্তর নিয়েই বিনামূল্যে প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে গরম গরম ভাত-তরকারি।
এমন ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে প্রতিদিন দুপুরে বন্দরনগর চট্টগ্রামের কলেজ সড়ক এবং সন্ধ্যায় কাজীর দেউড়ি চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের পাশে, আর এ উদ্যোগের নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’।
বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকায় একদল তরুণ ভালো কাজকে উৎসাহিত করতে খুলে বসেন এ ভ্রাম্যমাণ হোটেলটি। বর্তমান এটি সাংগঠনিক রূপে ‘ইউথ ফর বাংলাদেশ’ নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামে বিভিন্ন স্পটে প্রায় চার হাজারের অধিক দাতা সদস্যের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
শনি থেকে বৃহস্পতিবার অসহায় মানুষকে অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার দিয়ে থাকেন তারা। শুক্রবার খাবার নিয়ে ছুটেন বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানা কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। দৈনিক ১০ জন সদস্য এ কাজে সহায়তা করেন।
সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজারের বেশি মিলের আয়োজন থাকে এবং চট্টগ্রামে প্রতিদিন সাড়ে চারশ মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে।
গল্পটা শুরু হয় ২০০৯ সালে। রাজধানী ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণের মন নাড়া দিয়েছিল অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এরপর গুটি গুটি পায়ে আজ এর অবস্থান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
চট্টগ্রামে হোটেলটি চালুর প্রথম দিকে মাসে একদিন দিয়ে শুরু হয়, পরবর্তীতে সপ্তাহে ১ দিন করা হয় এবং গত একবছর ধরে সপ্তাহে ৭ দিন দুপুর ও সন্ধ্যায় চলমান হোটেলের কার্যক্রম।
ভালো কাজের হোটেলের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, তারা প্রত্যেকেই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা এখানে ভালো কাজের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসেন। খাবার বিতরণে কোনও নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় মাঝে মধ্যে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। রোদ-বৃষ্টি কিংবা আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়, বিশেষ করে যেসব জায়গায় খাওয়ানো হয় সেখানে ছাউনি নেই।
তবে সব বাধা উৎরে আলোর গতিতে ছুটছে ভালো কাজের হোটেলের কর্যক্রম। রান্না করার জন্য চট্টগ্রামের সরাইপাড়া এলাকায় রয়েছে কিচেন, বাবুর্চি আর নির্ধারিত কর্মচারী।
ভালো কাজের হোটেল চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মো. মোরশেদ বলেন, হোটেলটি পরিচালনার জন্য দৈনিক সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি দশ টাকা হরে মাসে তিনশ টাকা নেওয়া চাঁদার টাকা একত্রিত করা হয়। বর্তমানে চার হাজারের বেশি সদস্য এবং কিছু দাতা সদস্যের সহযোগিতায় হোটেলটি পরিচালিত হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানান কারণে মাসে ত্রিশ দিনে ত্রিশ দিন কর্মসূচি পরিচালনা করতে অসুবিধা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা কুড়িগ্রাম নয়, সুযোগ মিললে সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবকরা ছড়িয়ে দিতে চান এ কার্যক্রম। অন্তত একবেলা হলেও কিছু দুখি মানুষকে পেট ভরে খাওয়াতে চান তারা।
এসএস/টিসি