চট্টগ্রাম: পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১৪-১৬ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানায় উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। উক্ত সময়ের মধ্যে সকল কর্মচারী যথাসময়ে কাজে যোগদান না করে কোম্পানির অভ্যন্তরে আন্দোলন, মারামারি, ভাঙচুর ও লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘কিছু শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ বন্ধ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। মারামারি ও ভাঙচুরে কারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা আহত হন এবং প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ অবস্থায় শ্রম আইন অনুযায়ী, কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। কারখানার শ্রমিকদের এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের-২০১৯ অনুযায়ী বেআইনি ধর্মঘটের পর্যায়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এবং শ্রমিকদের বাধার কারণে কারাখানা কার্যক্রম চালু রাখা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না’।
সিইপিজেড এলাকায় প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা- প্যাসিফিক জিনস (২টি ইউনিট), জিনস ২০০০, প্যাসিফিক এক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স, ইউনিভার্সেল জিনস (৪টি ইউনিট), এনএইচটি ফ্যাশন। এসব কারখানায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইপিজেডে প্যাসিফিক গ্রুপের বিভিন্ন কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ইপিজেড থানার ওসি মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ৭টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক গ্রুপের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। বর্তমানে ইপিজেড এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলায় অংশ নিয়ে কাজ বন্ধ রাখলে কিংবা বিশৃঙ্খলার কারণে কারখানা বন্ধ রাখতে হলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ বা ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’-এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার কথা বলেছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। ইতিমধ্যে অনেক কারখানায় তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
বিজিএমইএ নেতারা জানান, শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুসারে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে এবং সে রকম পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখলে মালিকরা কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন এবং এই সময়ে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে না।
শিল্প পুলিশের হিসাবে, চট্টগ্রামে ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০টি কারখানা লে-অফ বা সাময়িক বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ পোশাক, সুতা তৈরি ও জুতার কারখানা। বিজিএমইএ’র আওতাধীন ১৮টি, বিকেএমইএ’র আওতাধীন ২টি, বিটিএমএ’র ১টি, বেপজা’র ৯টি ও অন্যান্য সংগঠনের ২২টি কারখানা সাময়িক বন্ধ হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে দুটি কারখানা। সেই তালিকায় যুক্ত হলো প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ৭টি কারখানা।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা বন্ধের চিঠি পেয়েছি। শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে মালিকপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে’।
এসি/টিসি