ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রাক-বাজেট: দেশি সিগারেট উৎপাদনকারীদের ২ প্রস্তাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
প্রাক-বাজেট: দেশি সিগারেট উৎপাদনকারীদের ২ প্রস্তাব চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভা

চট্টগ্রাম: দেশি সিগারেট উৎপাদনকারীদের পক্ষ থেকে দুইটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায়। সেগুলো হচ্ছে- ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিম্নস্তরে মূল্য বিভাজন সংক্রান্ত পদক্ষেপ অনুযায়ী দেশি ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকায় দামের মধ্যে ন্যূনতম ১ টাকা পার্থক্য করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতি ১০ শলাকার মূল্য দেশি সিগারেট ৩৯ টাকা ও আন্তর্জাতিক সিগারেট ৪৯ টাকায় দাম নির্ধারণ।

অথবা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বর্তমানে বাজারে নিম্নস্তরে বিদেশি কোম্পানির বাজারজাতকৃত আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যস্তরে উন্নীত করে নিম্নস্তর শুধু দেশি কোম্পানির দেশি সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখা। প্রস্তাব ‍দুটির যেকোনো একটি বাস্তবায়িত হলে, সরকারের রাজস্ব আদায় বর্তমান বছরের তুলনায় ২২ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

রোববার (২০ মার্চ) আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে লোকালি সিগারেট ম্যানুফেকচারার মালিক সমিতির পক্ষে আবদুল আউয়াল মোহন প্রস্তাবনা দুইটি উপস্থাপন করেন।  

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমদ, সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা।  

আবদুল আউয়াল মোহন বলেন, বর্তমানে এদেশের অনেক বৃহৎ ও নামকরা শিল্পগোষ্ঠীর উত্থান তামাক ব্যবসার মাধ্যমে। সিগারেট খাত এই তামাক ব্যবসার একটি অংশ। সিগারেট খাতে ২০০৩ পূর্ববর্তী সময়ে অরাজক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান ছিল। তখন এই খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য ২০০৩ সালে স্ল্যাব প্রথা প্রবর্তন করা হয় এবং নিম্নস্তর দেশি কোম্পানির জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। এটি একটি অলিখিত সমঝোতা এনবিআরের উপস্থিতিতে সিগারেট মালিকদের মধ্যে ছিল। সেই সময়ে নিম্ন স্ল্যাবে দেশি কোম্পানির বাজার হিস্যা ছিল ১০০ ভাগ।  

একমাত্র বিদেশি কোম্পানি যারা মধ্যম থেকে উচ্চস্তরে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করতো। কিন্তু ২০০৮-০৯ সাল থেকে উক্ত বিদেশি কোম্পানি নিম্নস্তরের বাজারে আন্তর্জাতিক নামী-দামি ব্র্যান্ডগুলো এনে উৎপাদন ও বাজারজাত করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশি কোম্পানিগুলো ক্রমান্বয়ে বাজার হারাতে থাকে। বর্তমানে দেশি কোম্পানির বাজার হিস্যা ১০ শতাংশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বহুজাতিক বা বিদেশি কোম্পানির বাজার হিস্যা ৯০ শতাংশের বেশি। তখন দেশি কোম্পানিগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরে, সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিম্নস্তরে মূল্য বিভাজন করে দেশি ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকার দামের মধ্যে ন্যূনতম ১ টাকা পার্থক্য রেখে দাম নির্ধারণ করে বিশেষ আদেশ জারি করে।

পরবর্তীতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেটে নিম্নস্তরে বাজারজাতকৃত বিদেশি কোম্পানির আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যম স্তরে উন্নীত করে, নিম্নস্তর শুধু দেশি কোম্পানির সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু এখনো উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে দেশি সিগারেট কোম্পানিগুলো বাজার হারিয়ে ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার পথে। এমনকি নিম্নস্তরে গত ১৫ বছরে প্রায় ৬৪২ শতাংশ সিগারেটের দাম বাড়ানো হয় এবং করভার বাড়ে ১১৫৪ শতাংশ। যার ফলে ২০১৭-১৮ সাল পরবর্তীতে দেশের বাজার চোরাচালান এবং নকল/ ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে তৈরি অবৈধ সিগারেটে সয়লাব হয়ে যায় এবং এতে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গোচরে আনার চেষ্টা করেছি।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গত দুই বছরে আপনার নেতৃত্বে এনবিআর প্রণীত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার কারণে, আমরা আজও মরি মরি করে বেঁচে আছি এবং ক্রমান্বয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। বর্তমান সিগারেট খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিতকরণ এবং দেশি শিল্পগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের দুইটি প্রস্তাবনা বিবেচনার আবেদন জানাই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।